শাস্ত্র পুরাণে লক্ষ্মীদেবীকে আদিশক্তি ভগবতী দেবী রূপে মানা হয়েছে। লক্ষ্মী ধন-দৌলত, অর্থের দেবী। তাঁর কৃপাতেই মানুষ ধন-দৌলত-সুখ-স্বাচ্ছন্দ-যশ-মান প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তাঁর দয়া মমতা মহাসাগরের মতো। তিনি কখনও কারও প্রতি কঠোর হোন না। যে কোনও মানুষ যদি ভক্তি ভরে ব্যাকুলভাবে তাঁর আরাধনা করেন তাহলে দুর্ভাগ্য দূর হয়ে, সৌভাগ্য আসে এবং ধনলাভ ঘটে। তাই হিন্দু গৃহস্থরা সারাবছর ধরেই প্রতি বৃহস্পতি বার মা লক্ষীর পূজা করে থাকেন। কেউ কেউ আবার কালীপুজোর দিনেও লক্ষ্মী পূজা করে থাকেন। এছাড়াও মা লক্ষ্মী সম্পদদায়িনীর বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন শেষ পূর্ণিমাতেও পূজিত হন। তবে আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমায় যে লক্ষ্মী পূজা হয় তা হল কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা।
চিত্র: শ্রীরামপুর নিবাসী শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র কর্ম্মকার কৃত কাঠখোদাই। ১৯০২-০৩ সালে প্রকাশিত বেণীমাধব দে'র পঞ্জিকায় দেবী লক্ষ্মীর এই খোদাই চিত্রটি ছাপা হয়েছিল।
লক্ষ্মী পুজোকে কেন কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বলা হয়?
কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি ‘কো জাগতী’ থেকে। অর্থাৎ ‘কে জেগে আছো?’ পূরাণে কথিত আছে, কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন মা মর্ত্যে এসে সকলের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখেন কে জেগে আছে এবং কে কে তাকে অভ্যর্থনা করে পূজা করছে এবং প্রদীপ জ্বালাচ্ছে । সেই সব ভক্তদের ই তিনি কৃপা করেন। কিন্তু যে বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, সেই বাড়িতে ধন-দৌলতের দেবী প্রবেশ করেন না। মুখ ফিরিয়ে চলে যান। সেজন্য নাকি রাত জেগে মা লক্ষ্মীর পূজা হয়। আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে সেই পূজা হওয়ায়, তাকে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা বলা হয়। সেই থেকেই লক্ষ্মী পূজার রাতে জেগে থাকার রীতি প্রচলিত আছে। সারারাত জেগে লক্ষ্মী আরাধনাই এই পূজার বিশেষত্ব।
নানান রূপে লক্ষ্মী
লক্ষ্মীর মূর্তি পূজা ছাড়াও নানান ভাবে লক্ষ্মীদেবীকে কল্পনা করে এদিন তাঁকে পূজা করা হয়। যেমন- আড়ি লক্ষ্মী। এ ক্ষেত্রে ধান ভর্তি ঝুড়ির ওপর কাঠের লম্বা দুটি সিঁদূর কৌটো লালচেলিতে মুড়ে লক্ষ্মীর রূপ দেওয়া হয়। আবার কলার পেটোর তৈরি নৌকা (সপ্ততরী)লক্ষ্মী আরাধনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাণিজ্যিক নৌকার প্রতীক এই সপ্ততরী। অনেকেই পূজার সময় এই সপ্ততরীতে টাকা, শস্য, হরিতকি, কড়ি, হলুদ রাখেন। কেউ কেউ আবার সরায় পটচিত্রের সাহায্যেও লক্ষ্মীপূজা করেন। যেমন- ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা ও শান্তিপুরি সরা। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় লক্ষ্মীসরা আঁকা হয়। অঞ্চল ভেদে এই সরায় তিন, পাঁচ, সাতটি দেব দেবীর ছবি আঁকা হয়। যেমন লক্ষ্মী, জয়া ও বিজয়া, রাধাকৃষ্ণ, সপরিবারে দুর্গা ইত্যাদি। সুরেশ্বরী সরায় মহিষাসুরমর্দিনী আঁকা থাকেন আর এই সরার নীচের দিকে থাকেন সবাহন লক্ষ্মী।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট