স্মরণে : কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় - Pralipta


অরন্য ভট্টাচার্য্য, পূর্ব বর্ধমান, ১৯ শে মে ২০২০ : রবীন্দ্র উত্তর পর্বে বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে যে তিনজন নক্ষত্রের নাম একসঙ্গে উচ্চারিত হয় তারা হলেন বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রয়ী - বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর ও আর একজন হলেন মানিক। মানিকবাবু ১৯০৮ সালে আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যদিও ওনার প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। 'কালোমানিক' ওনার ডাক নাম। তাই সেই ডাকনামের আড়ালে চাপা পরে গেছে ওনার আসল নামটি। তাই সাহিত্যের পাতায় তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামেই বেশি পরিচিত। 

তিনি বাস্তবের গভীরে ডুব দিয়ে জীবনের জটিলতাকে ধরতে চেয়েছেন। সেজন্য তথাকথিত রোমান্টিকতা পরিত্যাগ করে তিনি বস্তুবাদ ও বিজ্ঞানদৃষ্টিকে গ্রহণ করেছেন। শুধু তাই নয়, সামাজিক সমস্যা ও ব্যক্তির পতনের কারণগুলিকে অনুসন্ধান করে তাকে তাঁর কথাসাহিত্যে রূপায়নের চেষ্টা করেছেন। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত  তাই ওনাকে বলেছেন, 'কল্লোলের কুলবর্ধন।' বুদ্ধদেব বসুর মতে তিনি 'Belated Kollolian'

ওনার পারিবারিক পেশা ছিল যজমানী। প্রথম জীবন থেকেই তিনি ছিলেন দুরন্ত, চঞ্চল, নির্ভীক ও হাসিখুশি স্বভাবের। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী ছাত্র। তবে প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতশাস্ত্রে বি.এস.সি অনার্স নিয়ে পড়া শুরু করলেও কৃতকার্য হতে পারেননি। হাজারো নতুন প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানে ওনার মন ছটফট করত। বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র মানিক বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়েই সাহিত্য সাধনার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন।

১৯৩৫ সালে ওনার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'জননী'। তারপর একে একে লিখে চললেন, 'দিবারাত্রির কাব্য', 'পুতুলনাচের ইতিকথা', 'পদ্মানদীর মাঝি', 'সহরতলী', 'অহিংসা', 'ধরা বাঁধা জীবন', 'পেশা', 'নাগপাশ' ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি লিখেছেন কিছু ছোটগল্প যেমন, 'অতসীমামি', 'প্রাগৈতিহাসিক', 'বৌ', 'সমুদ্রের স্বাদ', 'ভেজাল', 'হলুদপোড়া', 'লাজুকলতা' ইত্যাদি। ওনার লেখা,  'পদ্মানদীর মাঝি', 'পুতুলনাচের ইতিকথা' উপন্যাস দুটি কালজয়ী উপন্যাস। যা প্রত্যেকটা সময়ে প্রত্যেকটা মুহূর্তে ভীষন ভাবে আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক। 

"ফুলকে দিয়ে
মানুষ বড় বেশী মিথ্যে বলায় বলেই
ফুলের উপর কোনদিনই আমার টান নেই।
তার চেয়ে আমার পছন্দ
আগুনের ফুলকি - 
যা দিয়ে কখনো মুখোশ হয় না। "সুভাষ মুখোপাধ্যায় 'পাথরের ফুল' কবিতায় যা লিখেছিলেন তা মানিকবাবুর শিল্পীসত্তার সঙ্গেও প্রযোজ্য। সত্যিই, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন শিল্পী যিনি কলম হাতে মুখোশ রচনা করেননি, বরং মুখোশের আড়ালে রয়েছে, যে আদিম, কৃত্রিম, মেকি, সুবিধাবাদী রূপ তাকেই তিনি উন্মোচন করেছেন শিল্পীজনোচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে। আজ ওনার জন্মদিনে ওনাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য।