Sex Worker : ভারতে যৌনকর্ম বৈধ: পতিতাবৃত্তি কেন পেশা হিসেবে বিবেচিত হল, সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে কতটা বদলে যাবে যৌনকর্মীদের জীবন? - Pralipta





Pralipta Desk: মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সারাংশ:

 "পতিতাবৃত্তি একটি পেশা এবং যৌনকর্মীরা আইনের অধীনে সম্মান এবং সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী," বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও, বিআর গাভাই এবং এএস বোপান্নার বেঞ্চ বলেছেন৷ 

পতিতাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পতিতাবৃত্তি নিয়ে দেশের শীর্ষ আদালত এই প্রথম এমন নির্দেশ দিল। আদালত স্পষ্টভাবে বলেছে যে যৌনকর্মী এবং তাদের মক্কেলদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো হেনস্থা করতে পারে না। উভয়ের সম্মতিতে এই কাজ যদি হয়ে থাকে। কোনরকম নির্যাতন-নিপীড়ন হলে যৌনকর্মীরাও আইনের সামনে সম্মান ও সমতা পাওয়ার অধিকারী।




এটাও বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় যে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর দেশে যৌনকর্মীদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে কি না? তারা কি এখন সত্যি আইনের আশ্রয় পাবে? প্রশাসন এবং পুলিশের পূর্ণ সহযোগিতা কিভাবে যৌন কর্মীরা? চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিতভাবে এবং আলোচনা করা যাক কমেন্ট বক্সে...

সব শেষে কী বললেন আদালত?

বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি এএস বোপান্নার সমন্বয়ে বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন, "পতিতাবৃত্তি একটি পেশা এবং যৌনকর্মীরা আইনের অধীনে সম্মান ও সমান সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী৷ যদিও পূর্ববর্তী আইন অনুসারে যৌনকর্মীকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে এবং তিনি নিজের ইচ্ছায় পতিতাবৃত্তি করছে কোন কারো নির্দেশে বা আদেশে বা ভয়ে নয়। যদি কারোর নির্দেশে আদেশে বা ভয়ে কেউ যৌনকর্ম করতে বাধ্য হন তাহলে পুলিশের উচিত এতে হস্তক্ষেপ করা বা তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া। অন্যথায় এর থেকে বিরত থাকা। সংবিধানের ২১ ধারা অনুযায়ী এদেশের প্রতিটি মানুষের মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে।" সংবিধান জাতি-ধর্ম-বর্ণ-পেশা নির্বিশেষে সকলকে সমান অধিকার প্রদান করেছেন।

আমাদের আইন এ সম্পর্কে কি বলে?

ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি) অনুসারে, পতিতাবৃত্তি বেআইনি নয়, তবে কিছু যৌন কার্যকলাপ রয়েছে যা আইনের কিছু বিধানের অধীনে শাস্তিযোগ্য। যেমন পাবলিক প্লেসে পতিতাবৃত্তি পরিষেবা গ্রহণের জন্য কাউকে প্রলুব্ধ করা, নাবালক নাবালিকাদের পতিতাবৃত্তি, হোটেলে পতিতাবৃত্তির কার্যক্রম পরিচালনা করা। যৌনকর্মীদের জোর করে অনিচ্ছায় পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা।

অনৈতিক ট্রাফিক (প্রতিরোধ) আইন, 1956 সালের একটি রায় অনুসারে, যদি কোনও পতিতা কাউকে অনুরোধ করতে বা প্রলুব্ধ করতে দেখা যায় তবে তাকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। এর সাথে সাথে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের ঠিকানা বা ফোন নম্বর পাবলিক করতেও নিষেধ করা হয়েছে। এটি একটি দন্ডনীয় অপরাধ এটি করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

 2014 সালে সংবিধানের 23 অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করা হয়েছিল। এতে মানব পাচার বাই হিউম্যান ট্রাফিকিং সংক্রান্ত অনেক বিধানও রয়েছে। যেমন জোরপূর্বক শ্রম করতে বাধ্য করা ও মানব পাচার ভারতবর্ষে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মানব পাচার এবং জোরপূর্বক শ্রমও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অর্থাৎ, পতিতাবৃত্তির ক্ষেত্রে যদি কোনো ব্যক্তি জোরপূর্বক কোনো নারীকে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করেন, তাহলে তাকে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে কোঠা বা দালাল ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল ভারতবর্ষে।

যদিও বর্তমান আইন অনুসারে সামগ্রিকভাবে পতিতাবৃত্তি ভারতে বেআইনি নয়, তবে জনসমক্ষে পতিতাবৃত্তি এবং পতিতাবৃত্তির অনুরোধ করা অপরাধের আওতায়। একইভাবে কোঠা বা পতিতালয় চালানোও বেআইনি। 

নতুন কী নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্ট?

যৌনকর্মীদের নিজেদের ইচ্ছামত যৌন মিলনের জন্য গ্রেফতার করা যাবে না। কিংবা তাকে কোনোভাবেই শাস্তি, হয়রানি বা অত্যাচার করা যাবেনা। পতিতালয়ে অভিযান চালিয়ে যৌনকর্মীদের গ্রেফতার করাও বেআইনি বলে ঘোষণা করা হলো। পুলিশ এবং প্রশাসন এ ধরনের কার্যকলাপ করতে পারে না।

 

 আদালত বলেছে, যৌনকর্মীর সন্তান যেন তার মায়ের যত্ন থেকে বঞ্চিত না হয়। যদি কোনো নাবালককে পতিতালয়ে বা যৌনকর্মীদের সঙ্গে থাকতে দেখা যায়, তাহলে তাকে মানব পাচার বাই হিউম্যান ট্রাফিকিং করা হয়েছে বলে মনে করা উচিত নয়। পতিতাদের সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তাদের সন্তানদের তাদের সাথে রাখার। যদি যৌনকর্মী দাবি করেন যে নাবালকটি তার ছেলে/মেয়ে, তবে এটি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি ডিএনএ পরীক্ষা করা যেতে পারে। পতিতার দাবি সত্য হলে, নাবালককে জোর করে আলাদা করা আইনত নিষিদ্ধ।

 

মিডিয়া যৌনকর্মীদের পরিচয় প্রকাশ করাতে পারেনা। যৌনকর্মী চাইলে তাকে তথাকথিত পতিতা সংশোধনাগার থেকে বের করে দেওয়ার বিধান স্বীকৃত। এ বিষয়ে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ভারত সরকার সহ সমস্ত রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চেয়েছেন শীর্ষ আদালত। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৭ জুলাই।

 

 অ্যাডভোকেট বিরাগ গুপ্ত ব্যাখ্যা করেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট 142 ধারার অধীনে এই অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছে। এই নিবন্ধের অধীনে সাধারণত চূড়ান্ত আদেশ দেওয়া হয়। এটি একটি ভিন্ন ঐতিহাসিক রায়ের বিষয়।

 

কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে নিলে কী পরিবর্তন হবে?

 সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে সমান আইনি অধিকারের ব্যাপারে। সরকারের নির্দেশনা মানলে যৌনকর্মীরাও অন্যান্য মানুষের মতো সমান আইনি অধিকার পাবে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, যদি কোনও যৌনকর্মী অপরাধমূলক, যৌন বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে কোনও অভিযোগ নথিভুক্ত করেন, তবে পুলিশকে তা গুরুত্ব সহকারে ডাইরি নিতে হবে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

 আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়িত হলে যৌনকর্মীরা গ্রেফতার হবে না, পুলিশের হাতে হয়রানিও হবে না। যদি একজন যৌনকর্মী যৌন সহিংসতার শিকার হন, তাহলে তাকে অন্য যে কোনো যৌন নির্যাতনকারীর মতোই চিকিৎসা সেবা এবং অন্যান্য সেবা দেওয়া হবে। সব যৌনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশকে ভদ্র আচরণ করতে হবে। তাদের মৌখিক বা শারীরিকভাবে নির্যাতন করা যাবে না।

 

 এই আইনের কি অপব্যবহার হবে?

অ্যাডভোকেট বিরাগ গুপ্ত বলেন, যখন আপনি যৌনকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার অধিকার দেন, তখন তার অপব্যবহারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। পেমেন্টের ভিত্তিতে সম্পর্কের পর কেউ অভিযোগ করলে দেওয়ানি চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে। তিনি প্রশ্ন করেন, সম্মতি এবং জবরদস্তির মধ্যে ব্যবধান কীভাবে নির্ধারণ করা হবে? কারণ পতিতা পরিসেবা গ্রহণ স্বেচ্ছায় এবং ধর্ষণ করে করা হয়। একটা আইনত সিদ্ধ এবং অপরটি আইনত অশুদ্ধ যদিও দুটি একই কর্ম। তাহলে এর অপব্যবহার আটকানো হবে কি করে।

 

 বিরাগ বলেছেন, “আদালত এই পুরো মামলার রায়েতে বিচারকরা যৌনকর্মী, তার সন্তান, সম্পত্তি, পতিতালয়, সবাইকে বিভিন্ন আইনি সুরক্ষা দিয়েছে। কিন্তু, সম্মিলিতভাবে যৌন ব্যবসা করা, এখনও একটি অপরাধ। এমতাবস্থায় পুলিশ যখন কোনো জায়গায় অভিযান চালায়, তখন সেখানে যে নারীকে বা নারীদেরকে পাওয়া যায়, সেখানে তারা কাজ করে বা পতিতালয় চালায় কীভাবে? তিনি বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট একটি ফৌজদারি মামলাকে পিআইএলে রূপান্তর করে সমস্ত পক্ষের স্বার্থে নির্দেশিকা তৈরি করেছে, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু, আগামী সময়ে তাদের ফৌজদারি আইন থেকে সুরক্ষা সংক্রান্ত আদেশ নিয়ে অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ যদি একটি আইন করা হয়ে থাকে, তাহলে আইন থাকা অবস্থায় তা নিষিদ্ধ করা কতটা সঙ্গত তা নিয়ে আগামী দিনে বিতর্ক হতে পারে।

 

আদালত কি এর আগে এই বিষয়ে এমন কোনো মন্তব্য করেছেন?

 2020 সালের সেপ্টেম্বরে, মুম্বাই হাইকোর্ট সংশোধনাগার থেকে তিন যৌনকর্মীকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এ সময় আদালত বলেছিল, পতিতাবৃত্তি কোনো অপরাধ নয়। প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের তাদের পেশা বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তাদের যৌন পেশাগত কারণে প্রভেদ সৃষ্টি করে আটক করা যাবে না। আদালত, অনৈতিক ট্রাফিক (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট (পিটা), 1956 এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে আইনে এমন কোনও বিধান নেই যা পতিতাবৃত্তিকে অপরাধ বলে প্রমাণিত করে। পতিতাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত কাউকে শাস্তি দেওয়ার কথাও সংবিধান বা আইন সংহিতা তথা অপরাধ সংহিতায় নেই।


Source: Internet