Sex Education : যৌনমিলনে অনীহা এবং আতঙ্ক কেন বেশি মেয়েদের? জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য - Pralipta


যৌনমিলন নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে এখনও সঙ্কোচ বোধ করেন অনেকে। সেক্স বা সঙ্গম নিয়ে নানারকম ছুঁৎমার্গ থাকলেও শারীরিক সম্পর্কেই একজন নারী বা পুরুষ চরম তৃপ্তি লাভ করতে পারেন তাতে কোনও সন্দেহই নেই।  চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরাও বলেন, শারীরিক সম্পর্ক শরীর-মনের ক্লান্তি দূর করতে পারে। প্রিয় মানুষটির ঘনিষ্ঠতায়, স্পর্শে মানসিক চাপ-উদ্বেগ থেকে অনেকখানি রেহাই পাওয়া যায়। নিয়মিত যৌনসঙ্গম সম্পর্কের সুস্থতা যেমন ধরে রাখে তেমনই বন্ধ্যত্বের সমস্যা কমায়, রোগ প্রতিরোধ বাড়ায়। কিন্তু যদি এর উল্টোটা হয়? সেক্সই আতঙ্ক হয়ে ওঠে, তখন কী করণীয়?

মেয়েদের ক্ষেত্রে সঙ্গম বা সেক্সে ফোবিয়া তৈরি হয় অনেক সময়। যৌনমিলন করতে ভয় হয়, সঙ্গী শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলে উদ্বেগ তৈরি হয়। মানসিক ট্রমায় ভোগেন অনেকে। এই ভয় বা আতঙ্কের অনেক কারণ আছে যেগুলো প্রকাশ্যে আসে না বেশিরভাগ সময়েই। কারণটা একই লজ্জা বা সেক্স নিয়ে অতিরিক্ত ছুঁৎমার্গ। নিজের সমস্যা খোলাখুলিভাবে বলতে যেমন সঙ্কোচ করেন মেয়েরা তেমনই ডাক্তারের কাছে যেতেও লজ্জাবোধ হয়। ফলে রোগ ধামাচাপা পড়ে যায়। যার থেকে নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভয়ের কী কী কারণ আছে।

মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপ, স্ট্রেস থেকে মিলনে অনীহা তৈরি হতে পারে। মাঝবয়সী বা চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা গিয়েছে। বিশেষ করে মেনোপজ হয়ে গিয়েছে বা মেনোপজের সময় এগিয়ে এসেছে যাঁদের, তাঁদের বেশিরভাগই শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার ইচ্ছা বা আগ্রহ দুটোই হারিয়ে ফেলেছেন। কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে যে এমনটা দেখা যায়নি তা নয়। তবে সংখ্যায় মাঝবয়সীরাই বেশি। গবেষকরা বলছেন, যৌন উত্তেজনা হারিয়ে যাওয়ার পিছনে যেমন নানাবিধ শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে, তেমনই কম ঘুম বা অনিদ্রাও একটা বড় কারণ হয়ে উঠতে পারে। কম ঘুম মানে কম সময় ধরে ঘুম নয়, টানা নিশ্ছিদ্র ঘুম। রাতের বেলা এই টানা ঘুমটাই যদি না হয়, তাহলে শরীর বিগড়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি। সেক্সুয়াল ডিসফাংশন বা যৌনতাজনিত রোগও দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়।

ব্যথার ভয়

প্রথমবার পেনিট্রেটিভ সেক্স করলে অনেক মেয়েই ব্যথা পাওয়ার কথা বলেন। তাছাড়া সবটাই যদি মেকানিক্যালভাবে হয়, তাতে আলতো ছোঁয়া বা ভালবাসার স্পর্শ না থাকে, তাহলে সেক্স ব্যাপারটাকে যান্ত্রিক কোনও পদ্ধতি মনে হতে পারে। সঙ্গীর প্রতি ভরসার জায়গাটা টলমলে থাকে, ফলে শারীরিক সমস্যাটা মূল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যৌন সম্পর্কের প্রতি আড়ষ্টতা তৈরি হয়।
শারীরিক গঠন নিয়ে সঙ্কোচবোধ
শরীরের গঠন নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভোগেন অনেক মেয়ে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক গঠন নিয়ে নানারকম বিদ্রুপ শুনতে হয়েছে যাঁদের, তাঁরাই অনেক বেশি ফোবিয়াতে ভোগেন। শারীরিক সৌষ্ঠব সঙ্গীর পছন্দ হবে কিনা, মিলনে তৃপ্তি আসবে কিনা এইসব ভাবনা থেকে স্ট্রেস তৈরি হয়। তখন মানসিকভাবে মিলনে তৃপ্তি পান না অনেকে।

অ্যানঅর্গাজমিয়া

সেক্সুয়াল স্টিমুলেশন সত্ত্বেও অর্গাজম হয় না অনেক মেয়ের। চুড়ান্ত যৌন উত্তেজনার সময়েও অর্গাজম হয় না। এর পিছনে মানসিক চাপ, সঙ্গীকে নিয়ে সমস্যা, হরমোন বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা যেমন আছে, তেমনই ইনসমনিয়ার সমস্যাও আছে। সঙ্গীর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যৌনমিলনের সময় পার্টনারের ভাল লাগা, খারাপ লাগার কথা খেয়াল রাখা জরুরি। সেটা অনেক সম্পর্কেই তৈরি হয় না, ফলে মিলনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন অনেকে।

যোনিতে সমস্যা

মেয়েদের যে সমস্যাটা প্রায়ই দেখা যায় তা হল যোনিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস (বিভি) বা ভ্যাজাইনাল ব্যাকটেরিওসিস। যোনিনালীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে যোনিস্রাব অত্যন্ত বেড়ে যায়, সেই সঙ্গে যোনিতে দুর্গন্ধ হতে পারে। প্রস্রাবের সঙ্গে জ্বালাপোড়া ব্যথা হয়, চুলকানি ও অস্বস্তি বাড়ে। এই সময় মিলন করলে রক্ত বের হতে পারে। অনেক মেয়েই এই সমস্যায় ভোগেন, কিন্তু ডাক্তাররে কাছে যেতে সঙ্কোচবোধ করেন। ফলে সমস্যা বাড়তে থাকে। যৌনমিলনে মানসিক বাধা তৈরি হয়।

মেনোপজের পরে ফোবিয়া

মেনোপজের পরে শারীরিক মিলনে উৎসাহ চলে যায় না, এমনটাই বলছে নতুন গবেষণা। তবে মেনোপজের ঠিক আগে থেকে সেক্স নিয়ে নানারকম ভয় তৈরি হয় মেয়েদের মনে। এই সময়টা মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য অনেক বদল আসতে থাকে। হরমোনের ভারসাম্য যেহেতু বদলাতে থাকে তাই মেজাজ খিটখিটে হতে পারে, ঘুম কমে যেতে শুরু করে, মিলনে অনীহা তৈরি হয়। আরও একরকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রপি। যদি অ্যাট্রপি বা ড্রাইনেস যদি থাকে, তাহলে মিলনের সময় যোনির ভেতর ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় প্রদাহ হয়, জায়গাটা ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত বের হতে পারে। ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ যদি কম হয় বা মেনোপজের পরে ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস থেকে ব্লিডিং হতে পারে। তখন যৌনমিলনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন মেয়েরা।