Kali Puja 2022: মায়ের কৃপাদৃষ্টিতেই নাকি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পান মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত! জানুন মাইতো কালির অলৌকিক কথা - Pralipta

কোয়েল সাহা : মা কালির পূজোর সাথে এমন কিছু অলৌকিক ঘটনা জড়িয়ে আছে,যা মানুষ চাইলেও ভুলতে পারেনা।যা শুনলে মনে হয়, বাস্তবের দুনিয়ায় বাইরে এমন এক জগৎ আছে যেখানে বিজ্ঞানের প্রবেশ নিষেধ।সালটা ১৭৪২,বাঁকু়ড়ার সোনামুখীকে বর্গি আক্রমণের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন মা-ই-তো কালী।তাই বাঁকু়ড়ার সোনামুখীর কাছে প্রধান উৎসব মা-ই-তো কালীপূজো। কিন্তু কেন এরকম নাম? কীই বা এর ইতিহাস?


ইতিহাসের বৈতরণী পার করে পৌছানো যাক আঠেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে।বর্গিদের সেই আক্রমণের সময় বাংলায় ছিল নবাবি শাসন।মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত সেই সময়ে বিষ্ণুপুর থেকে মল্ল সেনাদের ভয়ে বিতাড়িত হয়ে আরেক মল্ল সাম্রাজ্য সোনামুখী দখলে আসেন এবং তার নেতৃত্বাধীন বর্গিদল তখন বাংলার আনাচ-কানাচে লুঠপাটের চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট সেই অঞ্চলের মানুষেরা‌। লুটপাট করতে করতে তারা উপস্থিত হল জঙ্গল ও আগাছায় ঘেরা সোনামুখী রানিবাজারে মা কালী মন্দিরের সামনে।এই জায়গাটা এমন গাছপালায় ঢাকা ছিল যে সাধারণ মানুষ দিনেদুপুরে যেতে ভয় পেত। এই মন্দিরকে ঘিরে এমন এক অলৌকিক ঘটনা আছে যা শুনলে আজও রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠে।কথিত আছে,সন্ধ্যায় ওই মন্দিরের এক বৃদ্ধ পুরোহিত মায়ের মন্দিরে আলো দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে একটি প্রদীপ নিয়ে বের হন এবং তা মন্দিরে ঘটের সামনে রেখে যখন বলিস্থানে হাড়িকাঠের সামনে প্রণাম করছিলেন।তখন ভাস্কর পণ্ডিত একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রণামরত ওই বৃদ্ধকে বলি দিতে উদ্যত হয়। সেই সময়ে কোন এক অলৌকিক ক্ষমতায় তাঁর হাতের খাঁড়া আটকে যায় এবং তিনি ভাবেন কেউ যেন বলপূর্বক তার হাতটি ধরে রয়েছেন। সেই মুহূর্তে তিনি হারিয়ে ফেলেন নিজের দৃষ্টিশক্তি।পরে বৃদ্ধ পুরোহিত মাকে প্রণাম করে ওঠে সমস্ত ঘটনা বুঝতে পারেন এবং দেবীর কাছে প্রার্থনা করে ওই বর্গি সর্দারকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন ওই পুরোহিত। এই ঘটনার পর সর্দার ভাস্কর পন্ডিত হঠাৎ ই বলে ওঠেন মা-ই তো মা, কালী হ্যায়।’ তারপর থেকেই দেবীর নাম হয়ে যায় মা-ই-তো কালী।


সারা বছর ধরে এখানে নিত্য পূজা হলেও দীপান্বিতা অমাবস্যায় পাঁচদিন ধরে জাঁকজমক সহকারে পূজো করা হয়।প্রাচীন ধারা বজায় রেখে কালীপুজোর দিন মাটির প্রতিমাকে কালো রং করা হয়। দিন গড়িয়ে আঁধার নামলে, আকাশে সন্ধ্যাতারা উঠলে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আঁকা হয় দেবীর চোখ। দেবীর উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। দেবী এখানে নিরাবরণ,তার মস্তক কয়েক হাত লম্বা এবংপ্রায় পায়ের তালু পর্যন্ত কেশ। প্রতিমার কানের পাশে থাকে লাল রং ।এই কালী দেবী প্রায় ৫৫০বছরের পুরনো। প্রথমে ষোড়শ প্রচারে মায়ের পুজো হয়।সূত্র ধর পরিবারও বেশ কয়েক পুরুষ ধরে মায়ের এবং শিবের মূর্তি তৈরি করেন। উনারাও মহা সৌভাগ্যশালী এবং দেবীর স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত। বর্তমানে তনু সূত্রধর, বিপদতারণ সূত্রধর, ও সাহেব সূত্র ধরের বংশ মায়ের মৃন্ময়ী রূপের সৃষ্টিকর্তা।কালীপুজোর দিন সেই পুরোনো ঘট বিসর্জন দিয়ে ফের নতুন করে ঘটের প্রতিষ্ঠা করা হয়।


শিবাজীর বর্গী সেনাপতি ভাস্কর পন্ডিত এই দেবীর পূজা করতেন।বর্গিদের বহু নির্দশন দেখা যায় মন্দিরে। এখনও মন্দিরে প্রমাণ স্বরূপ বর্গী সেনাপতির খড়গ ও পঞ্চমুখী আসন রয়েছে। কথিত আছে আগে এখানে দেবীর মন্দিরে নরবলি হত। কালীপুজোর পাঁচ দিন অজস্র পাঁঠা বলি হয়। বছরের প্রায় সব দিনই পাঁঠা বলি হয় এখানে। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এখানে পুজো চলে টানা পাঁচ দিন। তৃতীয় দিন সাধারণ মানুষের সেবায় পাত পড়ে প্রায় ১৫ হাজার জন লোকের।সনাতন রীতি অনুযায়ী মাকে নিয়ে ৪২ জন বেহারা কাঁধে চাপিয়ে মন্দির থেকে গোটা সোনামুখী শহর প্রদক্ষিণ করেন এবং স্থানীয় জলাশয়ে মায়ের বিসর্জন হয়।এখানকার মানুষের বিশ্বাস দেবী সর্বদা তাদেরকে রক্ষা করে চলেছেন এবং তাদের ভালোমন্দ, সুখদুঃখের সঙ্গী। ৫৫০ বছরের প্রাচীন এই দুর্ধর্ষ বর্গী আক্রমণের স্মৃতি ও মল্ল সাম্রাজ্যের ইতিহাসের কথা সব যেন এক ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে আগামী নবপ্রজন্মের কাছে।

তথ্যসূত্র ও ছবি : ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত