প্রীতম রায়, উত্তর কোলকাতা : যেদিকেই চোখ যায় নিঃস্তব্ধতার মোড়কে যেন ঢেকে গেছে গোটা দেশ, ঘন্টার পর ঘন্টায় চোখ আটকে টিভির পর্দায় ভেসে উঠেছে আপডেটেড বুলেটিন বাড়ছে মৃত্যুমিছিল বাড়ছে আরো আক্রান্ত।চারদিকে হাহাকার স্বাস্থ্যহানি খাদ্য যেখানে জুটবে কিনা প্রশ্নের মুখে যেখানে বেঁচে থাকাটা সংশয় শিক্ষা, সংস্কৃতি,বিনোদন সেখানে ফ্যান্টাসি।“বানিজ্যে বসতি লক্ষী” আজ সেখানেই অলক্ষীর কালো মেঘ গৃহবন্ধী দশায় কাটছে সাড়ে সাথীর জীবন।লকডাউনের প্রভাবে গোটা বিশ্বে বহুমানুষের কর্মহীনের আশঙ্কা।
অকালের চক্রে ব্যস্ত দুনিয়াটা হঠাৎ করেই থমকে গেছে।কালের ঘড়ি থেকে কেউ যেন মজা করেই খুলে নিয়ে গেছে সচল ব্যাটারি টাকে।দুষ্টু টাকে খুঁজে পাওয়া গেলেই হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে আগের মতো।ক্যালেন্ডারে লাল কালি দেওয়া আজকের ডেটটা চোখে পড়লেই নস্টালজিক হযে পড়াটাই স্বাভাবিক।এই দিনটার সাথেই সাজানো অতীতের অনেক পুরোনো্ অ্যালবাম যার নাম অক্ষয় তৃতীয়া।
একসময় এই দিনটা শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ ছিল স্বর্ন ব্যাবসায়ীদের জন্য।পুরানে এই তৃতীয়ার কথার উল্লেখ আছে।প্রথমটি অনন্ত তৃতীয়া,দ্বিতীয়টি আর্দ্রানন্দকরী তৃতীয়া,তৃতীয়টি হল অক্ষয় তৃতীয়া।
অক্ষয় তৃতীয়ার অর্থ হল যার কোন ক্ষয় নেই।ধর্ম,অর্থ,জন,সম্পদ যা কিছু সঞ্চিত হবে তা চিরকালই সঞ্চয় হয়ে থাকবে।পরিণত হবে অক্ষয় এক অধিকারে।নতুন কোন দোকান কেন, গাড়ি কেনা,বাড়ি কেনা,গৃহ প্রবেশ এই সকল শুভ কাজ সম্পন্নের ক্ষেত্রে দিনটাকে মানা হতো।সকাল হতেই দোকানের চারপাশ ঝাট দেওয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যস্ততা লেগে থাকতো।দোকানে দোকানে আমপাতা,শোলার ফুলের মালা কোথাও আবার গাদার মালায় সাজানো দোকানের সামনে টা।নতুন জামা কাপড় আর উগ্র ধুপের গন্ধে চারদিক মউ মউ করছে।পরিবেশনে রাখা হয়েছে দইয়ের সরবত,কুলফি,কাজু কিসমিস ছড়ানো মালাই আরও কত কি।ভিতরে ক্যাশবাক্সের সামনে সেজে গুজে বসেছেন সদাহাস্য মালিক,পরনে বাঙালি ট্র্যাডিশন ধুতি পাঞ্জাবি আর কপালে লাল চন্দনের ফোঁটা।দুজন কর্মচারী সদা ব্যস্ত অতিথি অভ্যর্থনায়।এদিকে বেলা গড়াচ্ছে একটু একটু করে ভিড় জমছে দোকানে।সামনে বরফের চাঁই ভেঙে বরফ দেওয়া হচ্ছে ঠান্ডা সরবতের গেলাসে,ওদিকে চার রকমের মিষ্টি সাথে নিমকি দিয়ে রেডি হচ্ছে মিষ্টির প্যাকেট বাইরে বসার চেয়ার।একে একে দোকানে প্রবেশ কিছুটা পাওনা মিটিয়ে বাংলা ক্যালেন্ডার আর মিষ্টির প্যাকেট হাতে বিদায় নিচ্ছেন সকলে অক্ষয় তৃতীয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে।