অমিত কুমার সাহা: চুঁচুড়ার দত্ত লজে যে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর থাকতেন এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। কলকাতার ব্যবসায়ী মাধব দত্ত এই বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন। এই মাধব দত্তের নামেই ছিল মাধববাবুর বাজার, সেটা কলুটোলা অঞ্চলের অধীন। পরবর্তী সময়ে এখানেই তৈরি হয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবন।
মাধব দত্ত প্রয়াত হলে ঠাকুর পরিবার এই লজটি
ভাড়া নেয়।এই দত্ত লজে দেবেন্দ্রনাথ অত্যন্ত সুখে থাকতেন। অক্ষয় কুমার 'মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও চুঁচুড়ার বাগান' লেখায় এই বাড়ি ও বাগান প্রসঙ্গে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন এই বাড়িতে দেবেন্দ্রনাথ সাত থেকে দশ বছর ছিলেন।১৮৭৫ খ্রীষ্টাব্দের মার্চে যখন মহর্ষির সহধর্মিণী সারদা সুন্দরী দেবী প্রয়াত হন এবং ১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসে বড়ছেলে দ্বিজেন্দ্রনাথের সপ্তম পুত্র সোমেন্দ্রনাথ পাগল হয়ে গেলে দেবেন্দ্রনাথ ভীষণ ভেঙ্গে পড়েন। মানসিক প্রশান্তির জন্যই তিনি গঙ্গাতীরে একটি বাড়ি খুঁজতে থাকেন।
চুঁচুড়ার দত্ত লজ বাড়িটির সন্ধান দেবেন্দ্রনাথকে দেন খুব সম্ভবত বীরভূমের ভুবনমোহন সিংহের নাতি এবং লর্ড সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহের পিতৃব্য শ্রীকন্ঠ সিংহ।
উল্লেখ্য এই দত্ত লজের বিপরীতে যে প্রাচীন বাড়িটির গায়ে' সিংহী বাড়ি' বলে একটি ফলক লাগানো আছে,সেটি শ্রীকন্ঠ সিংহের পরিবারের।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শুভপরিণয় সম্পন্ন হয় ১৮৮৩
খ্রীষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে।ঐ রাতেই দেবেন্দ্রনাথের জেষ্ঠ্যজামাই সারদাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় মারা যান। মহর্ষি তখন উত্তরভারতে।এই শোক তাঁকে আকুল করে। ডিসেম্বর মাসে তিনি চুঁচুড়াতে চলে আসেন।
রবীন্দ্রনাথের বিয়ের কিছুদিনের ভেতরেই নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবীর আফিম খেয়ে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। মহর্ষি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন চুঁচুড়াতে বসেই।
১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে হুগলী স্টেশন দিয়ে চুঁচুড়ার বাড়িতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তখন সঙ্গে এসেছিলেন জ্যোতিন্দ্রনাথ। তাঁরা মহর্ষিকে গান শোনান। মহর্ষি কবিকে পুরস্কৃত করেন ৫০০ টাকার একটি চেক দিয়ে।এরপর রাজনারায়ণ বসু এসে দেখেন মহর্ষির অবস্থা খুব খারাপ। এর আগে কলকাতা থেকে অনেকে মহর্ষিকে দেখতে ও উপদেশ নিতে আসেন। এতে মহর্ষির শরীরে চাপ পড়ে। তিনি অসুস্থ হয়ে যান।
মহর্ষি একটু সুস্থ হলে ডাক্তার নীলমাধব হালদার
তাঁকে কলকাতায় ফিরে যাবার পরামর্শ দেন। ডাক্তার হালদার কলকাতা থেকে এসে মহর্ষির চিকিৎসার ভার নিয়েছিলেন। এরপর যতীন্দ্রমোহন ঠাকুরের স্টিমারে মহর্ষিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দার্জিলিং। দার্জিলিং থেকে আবার চুঁচুড়া।
শেষে ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে চুঁচুড়া থেকে মহর্ষিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।আর চুঁচুড়ায় ফেরা হয়নি মহর্ষির।
তথ্যসূত্র:
১.মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ও চুঁচুড়ার বাগান-- অক্ষয়কুমার আঢ্য
২.রবিজীবনী-- প্রশান্ত কুমার পাল (১ ম থেকে ৩ য় খন্ড)
৩.রবীন্দ্রনাথ ও চন্দননগর অঞ্চল-- অধ্যাপক শংকর বন্দোপাধ্যায়
৪.শহর চুঁচুড়া--অসিত বরণ মুখোপাধ্যায়
৫.এছাড়াও চুঁচুড়া শহরের কিছু প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব