নবদ্বীপ ও তাঁতশিল্প - Pralipta


অমিত কুমার সাহা : নবদ্বীপ প্রধানত বৈষ্ণবতীর্থ। এখানে শিল্পের আধিক‍্য সেই অর্থে প্রায় নেই বললেই চলে। যদিও চারুশিল্পের চর্চা বিভিন্ন আঙ্গিকে বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে, কারুশিল্পের প্রচার ও প্রসার প্রায় অস্তমিত! কারুশিল্প হিসাবে যদি তাঁতশিল্পকে অগ্রজ মনে করা হয় নবদ্বীপে, তবে এখন তা প্রায় অতীত। এই অতীতের হাত ধরেই চলুন ঘুরে আসা যাক নবদ্বীপের তাঁতশিল্পের শিকড়ে :

নবদ্বীপে কতকাল আগে তাঁত শুরু হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা বেশ দুষ্কর। অনুমিত হয় যে শ্রী চৈতন্যদেবের সময়ে এ শহরে তাঁত ছিল না। জানা যায়, শান্তিপুরের 'বোকা' বংশের প্রথম পুরুষ শিবরাম ধামরাই থেকে তাঁর সহধর্মিণীকে
নিয়ে নবদ্বীপে আসলে চৈতন্যদেব তাঁকে শান্তিপুরে চলে যাবার নির্দেশ দেন। এর কারণ হিসেবে সহজেই অবশ্যই বলা যেতে পারে তাঁতশিল্পের অনুপস্থিতি। তাঁতের সুযোগ নবদ্বীপে
থাকলে চৈতন্যদেব তাঁকে শান্তিপুরে চলে যেতে বলতেন না। বস্তুত, নবদ্বীপে তাঁতের প্রসার স্বাধীনতার পর থেকে। মূলত ঢাকা, পাবনা, টাঙ্গাইল থেকে আগত নাথ দেবনাথরা এই কাজ শুরু করেন। মোটা শাড়ির পাশাপাশি তাঁরা জামদানি শাড়িরও উৎপাদন শুরু করেন।

তাঁত ছিল এ শহরের একসময়ের সবসময়ের সঙ্গী। সকাল সন্ধ্যা মাকুর শব্দ; বছরভর, অবিরাম। কিন্তু এখন সেসব অতীত। শহরাঞ্চলে সেই অর্থে মাকুর শব্দ শোনা যায় না বললেই চলে। অথচ এ শহরের বুকেই মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে তাঁতশাড়ি বিক্রির একের পর এক বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান; মহাসমারোহে (প্রায়শই আশপাশের অঞ্চল থেকে আগত)! আজকের এই কর্মসঙ্কটের সময়ে শহরের তাঁতশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য এই শিল্পের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও আন্তরিক প্রয়াস ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা হয়ত একান্তই জরুরী।
... 
তথ্যসূত্র :

১. 'নদিয়ার তাঁতশিল্প'- হরিপদ বসাক 
২. নবদ্বীপ শহরের কিছু ব‍্যক্তিত্ব