Chandannagar: হুগলী চন্দননগরের সম্বলা শিবতলা মহাপ্রভু মন্দির - Pralipta

অনির্বান সাহা

প্রতিষ্ঠা বর্ষ : আনুমানিক ৩০০ বছর পূর্বে ।


প্রতিষ্ঠাতা : মন্দিরের বর্তমান প্রধান পুরোহিত এবং স্থানীয় মানুষদের সাথে কথা বলে এই মন্দিরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার নাম জানা যায় না । তবে সকলেরই অনুমান যে, বৈষ্ণব সম্প্রদায় ভুক্ত এক অজ্ঞাত পরিচয় জনৈক ব্যক্তি ।


অধিষ্ঠাত্রী দেব-দেবী : শ্রী শ্রী জগন্নাথ (নিম কাঠের), বলরাম ও সুভদ্রা, সরভূজ মহাপ্রভু  (নিম কাঠের), বাবা মহাদেব, গৌড়-নিতাই ।


ঠিকানা : আশুতোষ নিয়োগী লেন, রথের সড়ক, সম্বলা শিবতলা, চন্দননগর, হুগলি ।


পথনির্দেশ : মানকুন্ডু রেল স্টেশনে নেবে অটো বা টোটো করে জি.টি.রোডের ওপরে অবস্থিত রথেরসড়কে আসতে হবে । সেখান থেকে সম্বলা শিবতলার দিকে চার পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথে এগোলেই মন্দিরটিকে দেখতে পাওয়া যায় ।


লোকগাথা : স্থানীয় বেশকিছু বাসিন্দা ও প্রধান পুরোহিতের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে জানা যায় যে, আনুমানিক ৩০০ বছর পূর্বে এখানে বৈষ্ণবদের একটি আড্ডাখানা গঠিত হয় । যার সংলগ্ন স্থানে (বর্তমানে মন্দিরের ডানদিকে) একটি কুঁড়েঘর, একটি গোয়াল ঘর  এবং একটি কুয়ো ছিল । তারা আরও জানান যে, একটি ছোট্ট দালানের অবস্থান এই স্থানেই ছিল এবং গর্ভগৃহের মূল বেদীতে মহাপ্রভুর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল । এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা, গঠনরীতি এবং মন্দিরের প্রাচীনত্ব সম্পর্কে আর বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না ।


বিশেষত্ব :

● এই মন্দিরটি শহরের অন্যতম প্রাচীন মন্দির হিসাবে পরিচিত । এই মন্দিরটির অন্যতম গুণ বা বিশেষত্ব হলো এই মন্দিরে শ্রী শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভু এবং বাবা মহাদেবের একত্রে অবস্থান লক্ষ্য করা যায়।

● এখানে শিবরাত্রি, নীল, দোল, জন্মাষ্টমী, নন্দ উৎসব, অন্নকূট এবং নিত্যানন্দ ত্রয়োদশীর দিন বিশেষ পূজা হয় ।

● এই মন্দিরে প্রায় ৮০-৯০ বছরের একটি রথও রয়েছে ।

●শ্রী শ্রী জগন্নাথ মহাপ্রভু থাকায় জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা, রথ এবং এই সম্পর্কিত অন্যান্য দিনগুলিতেও যথেষ্ট ভক্তি সহযোগে বিশেষ পূজা ও ভোগ অর্পণ করা হয় মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে ।


নবনির্মাণ বা সংস্করণ : 

●৩০০ বছরের বেশি এই মন্দিরটির বয়স হওয়ায় দীর্ঘ পরিচর্যার অভাবে মন্দিরটি জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয় । অবশেষে ১২ই জুলাই, ২০০২ সালে আমেরিকা নিবাসী ড: প্রদ্যুৎ কুমার দে ও তার সহধর্মিনী শ্রীমতি কৃষ্ণ দে মহাশয়ার পূর্ণ আর্থিক সহযোগিতায় এই মন্দিরটি পূর্ণাঙ্গ রূপে সংস্কার করা হয় এবং বেশ কিছু অংশ নতুন ভাবে নির্মাণ করা হয় । নবনির্মাণকালে মন্দিরটিকে শ্বেত পাথর দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় । তবে মন্দিরের গর্ভগৃহের মূল বেদী এবং সেই প্রাচীন কুয়োটি  অপরিবর্তিত রাখা হয়।

● ৮০-৯০ বছরের পুরনো কাঠের রথটিও দীর্ঘ পরিচর্যার অভাবে এবং বয়সের ভারে জীর্ণ হয়ে পড়লে ২০১৬ সালে তা লোহা দ্বারা নির্মাণ করা হয় । এই খরচ সম্ভবত মন্দির কমিটির মাধ্যমে বহন করা হয় ।


বর্তমান অবস্থা :

● এই মন্দিরটিতে একটি পরিচালন কমিটি বা ট্রাস্ট রয়েছে এই ট্রাস্টের মাধ্যমে বর্তমানে মন্দিরটির সম্পর্কে যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

● তবে মন্দিরের নিত্য পূজার খরচ ট্রাস্টের মাধ্যমে বহন করা হয় না । ভক্ত ও স্থানীয়দের মাসিক  অনুদানের (২০-২০০ টাকা পর্যন্ত অনুদানের ব্যবস্থা চালু রয়েছে এখানে) মাধ্যমে এই খরচ বহন করা হয়।

● বর্তমানে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন নিমাই চাঁদ বাবাজি । তিনি আনুমানিক ৩০বছর এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসাবে যুক্ত রয়েছেন ।

● এই মন্দিরে প্রত্যহ চারবেলা নৃত্য পূজার ব্যবস্থা রয়েছে । এছাড়াও বিশেষ বিশেষ দিনে ভোগ প্রদানের ব্যবস্থাও রয়েছে ।

● রথযাত্রার দিন মন্দিরের রথটিকে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে জগন্নাথ, বলরাম সুভদ্রাকেঅধিষ্ঠা রথে অধিষ্ঠান করিয়ে শহরের একটি নির্দিষ্ট রাস্তায় প্রদক্ষিণ করানো হয় যথেষ্ট আড়ম্বর সহযোগে । এই রীতি এই মন্দিরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বর্তমানেও চালু রয়েছে ।



তথ্যসূত্র :

-- "চন্দননগর সেকাল একাল" - শ্রী শুভ্রাংশু কুমার রায় ।

– মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত শ্রীযুক্ত নিমাই চাঁদ বাবাজি মহাশয়ের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ।

– স্থানীয় বাসিন্দা তথা মন্দির পরিচালন কমিটি বা মন্দিরের ট্রাস্টের এক অন্যতম সদস্য শ্রীযুক্ত প্রবীর কুমার দাস মহাশয়ের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য ।