ন্যাটোর গঠনমূলক নীতি ও কার্যাবলী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা - Pralipta


বর্নালী দাস : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মূলত ইউরোপ জুড়ে শান্তি বজায় রাখার জন্য ন্যাটোর গঠন করা হয়। যার পূর্ণ নাম হল নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। উত্তর আটলান্টিক এর ৩০ টি দেশকে নিয়ে ন্যাটোর পথ চলা শুরু হয়, যার মধ্যে ২৮ টি ইউরোপের এবং ২ টি  আমেরিকার দেশ রয়েছে।  ৪ এপ্রিল , ১৯৪৯ এ এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি মুলত এই ৩০ টি দেশের সম্মিলিত মিলিটারি জোট। এই ন্যাটোর সৃষ্টি হওয়ার পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন রয়েছে, কারনটি জানতে হলে চলে জেতে হবে সেই সময় যখন সবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে, সেই সময় দুটি শক্তিশালি দেশের পরিচয় পাওয়া যায়, এক সোভিয়েত ইউনিওন অপরটি হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এর চোখ রাঙ্গানি ও আগ্রাসনের হাত  থেকে বাঁচার উদ্দেশে তাই তৈরি হয় ন্যাটোর মত মিলিটারি জোটের।  সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় হল বেলজিয়াম এর ব্রাসেলসে। এটি তৈরির সময় বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব সংস্থার সাহায্য পেয়েছিল, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এর মতন সংস্থারা এর সাথে ছিল।

এবার আসা যাক এর কাজে, ন্যাটো তার সদস্য দেশগুলির সুরক্ষা বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং এই প্রসঙ্গে  ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ এর কথাটি  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এতে বলা হয়েছে যখন কোন ন্যাটোভুক্ত দেশের ওপর আক্রমন হবে তখন বাকি ২৯ টি দেশ ও একসাথেই লড়বে, ন্যাটো বাহিনীকে  অনেকেই আমেরিকার মিলিটারি বাহিনীর একটি সদস্য বলে মনে করেন। এই সংস্থার আর্থিক ভূমিকাও প্রচুর আছে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত কোন ন্যাটোভুক্ত দেশকে যথেষ্ট আর্থিক সুবিধাও দেওয়া হয়। তার সাথে যে ছোট ছোট দেশগুলি নিজেদের সামরিক সুবিধাও লাভ করে। যা তাদের একার দ্বারা সম্ভব ছিল না। এবং ন্যাটোর ৩, ৪ টি দেশ এইরকম আছে যারা পরমানু শক্তি যুক্ত দেশ, তাহলে এখানে ন্যাটোর অন্তরভুক্ত দেশ যারা আছে আর্থিক ও সামরিক সব সুবিধাই পাচ্ছে। 

তবে একটি জিনিস ভুললে চলবে না ন্যাটো বাহিনি শুধু বাহ্যিক সুরক্ষা প্রদান করবে। গৃহযুদ্ধ কিন্তু কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু সামগ্রিক দিক থেকে সাইবার যুদ্ধ থেকে সামরিক সবেতেই সাহায্য করে। এবার আসি সোভিয়েত ইউনিয়ন এর কথায়, যখন দেখলো সব দেশ একত্রিত হচ্ছে সোভিয়েত এর বিরুদ্ধে তখন "ওয়ার সো প্যাক্ট" নামে একটি গ্রুপ গঠন করলো এবং যেহেতু সেই সময় জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল তাই পূর্ব জার্মানি সহ কিছু দেশ এই "ওয়ার সো প্যাক্ট" এর মধ্যে এল কিন্তু পশ্চিম জার্মানি গেল ন্যাটোতে, যার ফলাফল হল বার্লিন প্রাচীর। এবং এখানেই শেষ নয় ন্যাটো বাহিনী নিজের মিলিটারি ক্ষমতা বাড়ায় এবং সোভিয়েত এরও পর চাপ সৃষ্টই করতে থাকে।

সব মিলিয়ে এখনকার পরিস্থিতি যদি বিচার করা যায় তাহলে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের আঁচ পুরো বিশ্বেই পড়েছে এবং ন্যাটোর মধ্যেও কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে কারন রাশিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়া কিন্তু নিজে থেকেই অনেক বড় ব্যপার।  

এবার প্রশ্ন হচ্ছে ভারত কেন ন্যাটোতে যোগ দিচ্ছে না ?আসলে পুরো বিশ্ব যখন দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেল তখন সবার নজর ছিল ভারতের দিকে কিন্তু তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ঠিক করেন ভারত কোনো পক্ষেই যোগ দেবে না। নিরপেক্ষ থাকবে, এবং সেই ধারাই চলে আসছে এখনও পর্যন্ত।