বিনোদতলা শিব মন্দির
অনির্বাণ সাহা : প্রাক ঔপনিবেশিক যুগে চন্দননগর যে তিনটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ছিল তাদের মধ্যে এই গোন্দলপাড়া ছিল সর্বাধিক পুরানো ও সমৃদ্ধ। মূল শহর চন্দননগরের পাশাপাশি এই গোন্দলপাড়া গ্রাম বা অঞ্চলটিরও এক দীর্ঘ ইতিহাস ও কৌলিন্য ছিল ও আছে। মনসামঙ্গল কাব্যে পাইকপাড়া নামক একটি স্থানের ভৌগলিক অবস্থান সহ বিবরণ পাওয়া যায়। যা গোন্দলপাড়ার ভৌগলিক অবস্থান ও বিবরণের সাথে একেবারে মিলে যায়। তাই মনে করা হয় যে তৎকালীনযুগে এই অঞ্চলে পাইক শ্রেণীর লোকদের বসবাস ছিল আর সেই কারণেই অঞ্চলটির নাম হয় পাইকপাড়া। তৎকালীন পাইকপাড়া বা পরবর্তী কালের গোন্দলপাড়া অধুনা দিনেমারডাঙ্গা থেকে লিচুতলা পর্যন্ত ও তৎসংলগ্ন এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল।
গোন্দলপাড়া নামের অনুসন্ধানে পাওয়া যায় প্রাক ঔপনিবেশিক দুটি কাহিনী। গোঁদল শব্দের অর্থ হল ঝিনুক যা চুন তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এই অঞ্চলে তৎকালীন যুগে চুনের কারখানা ও ব্যবসা ছিল। আর সেকারণে এখানে চুন শ্রমিকদের বসবাস ছিল। সেকারণেই এই স্থানের এরূপ নাম হয়েছে বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। আবার বিমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের "গোন্দলপাড়ার অতীত ও বর্তমান" বইটি থেকে জানা যায় এই অঞ্চলে মালো, কৈবর্ত প্রজাতির বেশকিছু মানুষের বসবাস ছিল প্রাচীনকালে । তারা এখানে ছোট ছোট ডিঙ্গি করে গঙ্গায় মাছ ধরত, এটাই ছিল তাদের প্রধান জীবিকা । তৎকালীন যুগে পর্তুগীজ জলদস্যুরা এই ছোট ছোট ডিঙ্গিগুলোকে বলতো "গন্ডোলা" । অনেকে মনে করেন সম্ভবত এই "গন্ডোলা" শব্দের অপভ্রংশ রূপই হল "গোন্দলপাড়া" ।
এই অঞ্চলে পুঁজি বা অর্থের সরবরাহের কোন অভাব সেযুগে ছিলনা। এখানে গোঁদল বা চুন শ্রমিকদের পাশাপাশি আরও অন্যান্য শ্রেণীর মানুষদের বসবাসের প্রমাণও পাওয়া যায় যেমন হাড়ি, মালো, পাইক, নিকিরি, তিলি প্রমুখ। এই সকল শ্রেণীর লোকেরা দল বেঁধে নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করতেন। এবিষয়ে বিতর্ক থাকলেও মনে করা হয় তৎকালীন গোন্দলপাড়ার একটি গঙ্গার ঘাটের সংলগ্ন এলাকায় এই তিলি শ্রেণীর লোকেরা বসবাস করতো। পরবর্তী কালে তাদের স্মৃতিতেই সেই নির্দিষ্ট গঙ্গার ঘাটটি ও অঞ্চলটি বর্তমানে তিলিঘাট নামে পরিচিত। প্রথমে পর্তুগিজরা ও পরে ড্যানিসদের হাত ঘুরে অষ্টাদশ শতকের শুরুতে এই স্থানটি সুরাটের তৎকালীন মুসলিম বণিক হোসেন আহমেদ চেলিবির অধিকারে আসে। গোন্দলপাড়াতে ড্যানিসদের দড়ির ব্যবসা তৎকালীন যুগে প্রভূত খ্যাতি অর্জন করে। কিন্তু মোঘলদের সাথে তাদের গণ্ডগোল লেগেই থাকতো। ড্যানিসদের হুগলি বন্দর থেকে মোঘলদের রপ্তানীযোগ্য মালভর্তি জাহাজ চুরির কিস্যা নিয়ে আজও হলিউডে সিনেমা বানানো যায়। হোসেন আহমেদ চেলিবি তার ব্যবসার কাজে এই স্থানের গঙ্গার ঘাটগুলি ব্যবহৃত হতো। এখানে একটি বহু প্রাচীন পীড়ের মাজা বা মসজিদ পাওয়া যায় যেখান থেকে এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাসের প্রমাণও পাওয়া যায়। এরপর এই স্থানটি মোঘল ফৌজদার খানজাহান খাঁয়ের সম্পতি হিসাবে গণ্য হয়। তিনি পরবর্তীকালে ফরাসী ও দীনেমারদের লিখিতভাবে কিছু কিছু অংশ ইজারা হিসাবে দেন। তারপর এই অঞ্চলটি পুনরায় হস্তান্তরিত হয় ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী মহাশয়ের হাতে। তিনি ফরাসীদের থেকে অঞ্চলটির মালিকানা বা ইজারা পান।
১৬৭৬ সালে দীনেমার বা ড্যানিস ক্যাপ্টেন Willkinse ঢাকার নবাবের থেকে বর্ধিত চুক্তির পরোয়ানা বার করে হুগলি ও বালেশ্বরে কুঠি বা বাণিজ্যঘাঁটি করার অধিকার লাভ করেন। এরপর ১৬৮৮ সালে দীনেমাররা প্রথম এই গোন্দলপাড়ার অঞ্চলে (অধুনা দীনেমারডাঙ্গা অঞ্চলে) তাদের ঘাঁটি তৈরি করেন। ১৬৯৮ সালে ঔরঙ্গজেবের নাতি, যিনি তৎকালীন বাংলার সর্বেসর্বা ছিলেন তার কাছ থেকে ফরমান বার করে দীনেমাররা পাকাপাকিভাবে গোন্দলপাড়া তথা সম্পূর্ণ চন্দননগরের অধিকারলাভ করে ও তাদের বাণিজ্যঘাটি তৈরি করে। ১৬৯৯ সালে ফরাসীরা এই শহরের সম্পূর্ণ অধিকারলাভ করে ও উঁচু পাঁচিল দিয়ে শহরকে ঘিরে দেয় শত্রুর হাত থেকে রক্ষার জন্য। যেহেতু দীনেমাররা ফরাসীদের আগে এই অঞ্চলে ছিল ও তাদের সাথে সুসম্পর্ক ছিল তাই সৌজন্যের খাতিরে দীনেমারদের এই গোন্দলপাড়ারই একটি বিশেষ অংশ ছেড়ে দেয় তাদের বাণিজ্যঘাঁটি করার জন্য। যে অঞ্চলটি বর্তমানে দীনেমারডাঙ্গা কলোনী নামে পরিচিত। পরবর্তীকালে ফরাসী ও দীনেমার দুজনেই এখান থেকে কার্পাস তুলো, সোরা, নীল, অফিম, রেশমবস্ত্র, চুন প্রভৃতি জিনিস রপ্তানী করতো। আর এরজন্য দরকার হতো প্রচুর পরিমাণে দড়ি। যা এই অঞ্চলে তৈরি হতো ও তখনকার অর্থনীতির মূল স্তম্ভ ছিল। বর্তমান চালকেপাড়ার তৎকালীন বাসিন্দা দত্তদের বেশ বড় দড়ির ব্যবসা ছিল।
পূর্বেও বলা হয়েছে এখানে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন বর্ণের ও ভিন্ন শ্রেণীর মানুষের বসবাস ছিল যেমন হিন্দু, মুসলিম, পাইক, নিকিরি, মালো প্রমুখ। বিমলেন্দু বন্দোপাধ্যায় মহাশয়ের লেখা “গোন্দলপাড়ার অতীত ও বর্তমান” গ্রন্থ থেকে জানা যায় বোধক সম্প্রদায়ের মানুষও এখানে বসবাস করতো। এদের এক পূর্বপুরুষ রামকোমল বোধক ধর্মঠাকুরের আদলে বিনোদরায়ের শিলা প্রতিস্ঠা করেন অধুনা বিনোদতলায়। এটি একটি বৌদ্ধদেবতার মূর্তি। এর গঠন চৌকো কালো পাথরের বৌদ্ধস্তুপের ন্যায়। তারমানে বোধক সম্প্রদায়ের মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল এখান থেকেই বোঝা যায়। তৎকালীন গোন্দলপাড়া তথা পুরো চন্দননগরেই চুরির প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়ে যায় প্রশাসনিক দুর্বলতার জন্য। লৌকিক মতে প্রচলিত ছিল এই বিনোদরায় শীলার সামনে কেউ পুঁটি মাছের চোখ গেলে রেখে চোরের শাস্তি কামনা করলে সেই চার শাস্তি পাবেই। প্রাথমিকভাবে বিনোদরায় চোরেদের যম আর গৃহস্থের দেবতা হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে। বৌদ্ধ দেবতা থেকে ধীরে ধীরে তিনি হিন্দুদের পূজিত দেবতা হিসাবে পূজিত হন। লৌকিক মতে দেবতার কাছ থেকে চোরের শাস্তি চেয়ে চুরির হাত থেকে বাঁচতে ধীরে সারা শহরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেব-দেবীর আবির্ভাব ঘটে ব্রাম্মণ ব্যাতিত তৎকালীন সাধারণ শ্রেণীর মানুষের হাত ধরেই কারণ তৎকালীন যুগে এই শহরে ব্রাম্মণ শ্রেণীর উত্থান ঘটেনি। যেমন বোড়োতে বোড়াইচন্ডী মা, খলিসানিতে বিশালাক্ষী মা, মানকুন্ডুতে শিব প্রভৃতি। এই সকল দেব-দেবী তৎকালীন যুগে মৎসজীবী, কৃষক, কারো, নিকিরি, পাইক প্রমুখ শ্রেণীর মানুষদের দ্বারা পূজিত হতেন এমনকি মানকুন্ডুতে শিব ঠাকুর মুসলমানদের পূজাও পেতেন। পরে ধীরে ধীরে সামাজিক পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সকল দেব-দেবীর আরাধনার জন্য এক বিশেষ জ্ঞানী শ্রেণীর জন্ম হয়। তারা হলেন ব্রাম্মন। এর পরবর্তীকালে ব্রাম্মন শ্রেণী ব্যাতিত দেব-দেবীর আরাধনা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এই শ্রেণীর লোকেদের বসবাস প্রাথমিকভাবে সীমাবদ্ধ ছিল গোন্দলপাড়ার বিশেষ কিছু স্থানে। সেই স্থানগুলি হলো অধুনা মনসাতলা, ষষ্টীতলা, কাছাড়ি ঘাট প্রভৃতি।
গোন্দলপাড়া তথা সমগ্র চন্দননগরেই ভারতের স্বাধীণতা সংগ্রামের বহু অগ্নিপুত্রের জন্ম হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কালান্তরজয়ী স্বাধীণতা সংগ্রামী বাঙালি বিপ্লবী উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে আনুমানিক ২০০-৩০০ বছরের পুরানো প্রচুর বাড়ি ছিল যার বেশিরভাগই আজ কালের গর্ভে নিমজ্জিত। এদের মধ্যে বেশকিছু বাড়ি যুগ যুগ ধরে বহু ইতিহাসের সঙ্গী হয়েও অবশ্য এখনও বর্তমান আছে কিন্তু তারা নিজেদের কৌলিন্য নিয়ে জরা-জীর্ণ অবস্থায় বর্তমানের আকাশচুম্বী অট্টালিকায় প্রায় ঢাকা পরে গেছে, যার খোঁজ আজ-কাল অনেকেই রাখেননা। শহরের অন্যান্য বাড়িগুলোর মতো এখানকার এইসব বাড়িগুলোতেও দেশের বহু মনীষী ও স্বাধীণতা সংগ্রামীরা তৎকালীন যুগে বহুবার আশ্রয় নিয়েছেন বৃটিশদের থেকে আত্মগোপন করার জন্য। এই সব বাড়িগুলোতে বসেই বহুবার বৃটিশদের আক্রমণের নীল নক্সা তৈরি হয়েছে। সেসব মনীষী ও স্বাধীণতা সংগ্রামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বসন্ত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋষি অরবিন্দ, সুরেন্দ্রনাথ মুখার্জী, স্যার আশুতোষ, কানাইলাল দত্ত, মাখনলাল প্রমুখ। এই বাড়িগুলো বর্তমানে গোন্দলপাড়ার অন্তর্গত মনসাতলা, চারমন্দিরতলা, চালকেরপাড়া, দীনেমারডাঙ্গায় অবস্থিত ছিল। শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বাসস্থান বা মিলনক্ষেত্রই নয় মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নির্ণয়কারী রাধানাথ শিকদারের বাড়িও ছিল এই গোন্দলপাড়া অঞ্চলে । বিশিষ্ট ক্ষেত্রসমীক্ষক, সাহিত্যিক, লেখক বিমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় (বসন্ত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের পুত্র) গোন্দলপাড়া অঞ্চলের খনেপাড়ায় বসবাস করতেন । এই অঞ্চলটি ক্রীড়াক্ষেত্রেও বিশেষ সম্মানের অধিকারী । প্রাচীনকাল থেকেই এই অঞ্চলে ব্রতচারী শিক্ষার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল বর্তমান সাতঘাটা এলাকায় । এলাকার প্রথম ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেঙ্গল স্পোর্টিং ক্লাবের নাম উল্লেখ করতে হয় । এই ক্লাবের এক সদস্য চন্দননগর স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে মোহনবাগানের বিপক্ষে ১৯১১ সালে খেলেছিলেন । মনসাতলার মাঠে এক সময় ভলিবল খেলা এবং শিক্ষাদান চলত । ভারতের বিশিষ্ট ভলিবল খেলোয়াড় দিলীপ মন্ডল মনসাতলা অঞ্চলে বসবাস করতেন এবং এই মাঠেই ভলিবল খেলতেন । এই এলাকার অবস্থিত চন্দননগর ফ্রেন্ডস ক্লাবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় । বর্তমানে এটি ক্রিকেট-ফুটবল-ভলিবলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত পরিচিত । মন্ডল বাগান মিলনী সংঘ একসময় চন্দননগর কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিল, এখানে নিয়মিত কবাডি খেলা হতো । এখানে একসময়ে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল, বর্তমানে তিনবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ঝর্না বিশ্বাস মহাশয়ার প্রশিক্ষনে এখানে একটি যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে । বর্তমানে অম্বিকা অ্যাথলেটিক ক্লাবে জিমন্যাসটিকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে ।
স্বাধীণ ভারতের অন্যান্য স্থানের মতোই চন্দননগরেও জমিদার প্রথা চালু হয়। শহরের বিভিন্ন স্থানে অর্থশালী জমিদারেরা তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি কায়েম করতে শুরু করে। তারা সেই অঞ্চলগুলোর যথাসাধ্য উন্নতি করার চেষ্টা করেন নিজেদের মতো করে ও নিজেদের সাধ্যমতো। নিজেদের খ্যাতি ও কৌলিন্য শহর তথা রাজ্যের মানুষের কাছে তুলে ধরতে নিজেদের বংশের নামানুসারে সেই অঞ্চলগুলির নামকরণ করেন। শহরের উত্তরে পালপাড়া, শুরপাড়া, কুণ্ডুঘাট প্রভৃতি তারই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। উত্তরের মতো শহরের দক্ষিণেও তথা তৎকালীন গোন্দলপাড়াতেও জমিদারদের প্রভাব দেখা যায়। ফলে তৎকালীন অবিভক্ত গোন্দলপাড়া ধীরে ধীরে টুকরো টুকরো অঞ্চলে বিভক্ত হয়ে পরে ও সেই অঞ্চলগুলি সেখানকার প্রভাবশালী জমিদার বংশের নামে পরিচিত হয়। যেমনঃ বর্তমান জিটি রোডের পূর্বে চক্রবতী পাড়া ও ব্যানার্জী পাড়া, পশ্চিমে দে পাড়া, দিনেমারডাঙ্গা কলোনিতে মালা পাড়া ও রায় পাড়া প্রভৃতি। বর্তমানে জ্যোতির মোড় থেকে গোন্দলপাড়া জুটমিল পর্যন্ত রাস্তাটির “মরাণ রোড” নামকরণের যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। ফরাসী আমলে এই বিস্তৃত অঞ্চল “মোরান(Moran)” নামক এক সাহেবের সম্পত্তি ছিল। এখানে তাঁর একটি কুঠি বা বাড়িও ছিল। যা “মোরান সাহেবের কুঠি” নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ব না থাকলেও এই বিস্তীর্ণ অঞ্চল সেই ফরাসী সাহেবের নামানুসারে “মরাণ রোড” নামে পরিচিত হয়। তিলিঘাট জলট্যাঙ্কের উত্তরে ও দক্ষিণের বেশকিছু এলাকা এবং জিটি রোডের পশ্চিমে লিচুতলার নিকট একটি অংশ চারমন্দিরতলার তৎকালীন জমিদার “মন্ডলদের” দখলে ছিল। এই স্থানে তাদের সুসজ্জিত বাগান ও বাগানবাড়ি ছিল। সেই বাগান বাড়ির অস্তিত্ব বর্তমানে পাওয়া না গেলেও এই স্থানগুলি “মন্ডলদের বাগান” বা “মন্ডল বাগান” নামে পরিচিত। বর্তমানে বেশোহাটা ও জি টি রোডের মধ্যবর্তী একটি অঞ্চলে প্রাচীনকালে মণ্ডলদের লিচুবাগান ছিল বলে অনেকে মনে করেন । এই বাগানের নামানুসারেই অঞ্চলটি "লিচুতলা" নামে পরিচিত হয় বলে মনে করা হয় । এছাড়াও জলট্যাঙ্কের নিকটবর্তী একটি ছোট্ট স্থানে প্রভাবশালী “বোস” পরিবারের বসবাস ছিল বলে শোনা যায়, সেই স্থানটি পরবর্তীতে “বোস পাড়া” নামে পরিচিত হয়।
...
তথ্যসূত্র :
- ডঃ বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা “চন্দননগরের প্রাক ঔপনিবেশিক ইতিহাস”।
- বিমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা "গোন্দলপাড়ার অতীত ও বর্তমান"।
- শুভ্রাংশু কুমার রায়ের লেখা "চন্দননগরের সেকাল-একাল"।
- মন্ডল বাগান মিলনী সংঘের ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত "মন্ডলবাগান মিলনীসংঘ - স্বর্ণোজ্জ্বল ৫০ বছরের স্মৃতিচারণা"।
- স্থানীয় পাক্ষিক সংবাদপত্র "গণপ্রগতি"।