চুঁচুড়ার দয়াময়ী কালী মন্দির - Pralipta

অঙ্কুর মজুমদার: প্রায় চারশো বছর আগে চুঁচুড়া খড়ুয়াবাজারে নেতাজী সুভাষ রোডের বাদশার আমল থেকে জগন্মাতা 'দয়াময়ী' রুপে অধিষ্টিতা।

মন্দির প্রবেশ দ্বারের মুখে বাঁদিকে সাদা পাথরের ফলকে লেখা 'দয়াময়ী কালীমন্দির'। সেবাইত গোপালরাম পাঠক।' অনেকটা আয়তাকার স্থান নিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণ। পূর্বদিকে দেবী দয়াময়ীর মন্দির। মন্দিরের কাছেই বাঁদিকে চারটি শিবমন্দির  বেশ বড় এবং  সযত্নে  রক্ষিত। অন‍্যান‍্য যে শিবমন্দির দেখা যায় তার থেকে স্বাতন্ত্র‍্য লক্ষ‍্য করা যায় এই শিবমন্দিরগুলো। গঠনভঙ্গিমা অত‍্যন্ত সুন্দর।

দেবীমূর্তির বাহ‍্যিকরুপের মধ‍্যে ভয়াবহতা রয়েছে। তিনি বিভীষণা, করালবদনী কিন্তু সকল ভক্তের কাছে তিনি করুণাময়ী, দয়াময়ী। স্থানীয় জনসাধারণ দেবী দয়াময়ীকে অতি জাগ্রত বলে মান‍্য করেন। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে দবীর চরণে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করেন। মন্দিরগুলির স্থাপত‍্যে মুসুলমান যুগের প্রভাব রয়েছে মনে হয়। মন্দিরের অভ‍্যন্তরের গঠন চারচালা মন্দিরের মতো। মূল মন্দিরটি ভবতারিণী জগৎজননী কালীর, মূর্তির আকৃতি খুব একটা বড় নয়। মূর্তির উচ্চতা প্রায় পৌনে দুই হাত, কষ্টিপাথরে নির্মিত মাতৃকামুর্তির জিহ্বা ও গয়না অলঙ্কার দিয়ে গড়া। মূর্তিটি সেই সময়কার ভাস্কর্য শিল্পের নিদর্শন বহন করে। পূবদিকে অবস্থিত পশ্চিমমুখী কালী মন্দিরের উত্তরদিকে এক সারিতে তিনটি শিব মন্দির অবস্থিত। সবকটি মন্দিরেই নাটমন্দির অনুপস্থিত কিন্তু মন্দিরের সামনে রয়েছে সুবিশাল খোলা উঠোন।

ষোড়শ শতকের শেষ ভাগে প্রায় গোটা হিন্দুস্তান ও বাংলায় শাসন কায়েম করেছেন বাদশাহ আকবর। যদিও এই সুবিশাল সাম্রাজ্যের দেখভাল করতে তিনি অনেকটাই নির্ভরশীল ছিলেন আঞ্চলিক জায়গীরদারদের ওপর। হুগলীও ছিল না ব্যতিক্রম।তবে তখন ‘হুগলী’ নামে এই অঞ্চলটি পরিচিত ছিল কিনা, সে নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। আকবরের রাজস্বসচিব টোডরমল এই অঞ্চলটির যাবতীয় শাসনভার সঁপেছিলেন এক আঞ্চলিক জায়গীরদার জিতেন রায়কে। জিতেন রায় ছিলেন দেবী কালির ভক্ত। তাঁর আর্থিক ও বৈষায়িক উন্নতিতে দেবীর কৃপা অনুভব করে কালীমন্দির নির্মান করে দেবীমূর্তী প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেবীর সেবা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন‍্য দেবত্র সম্পত্তি দান করেন। পরবর্তীকালে শোনা যায় গোরক্ষপুরের অবাঙালি ধনী দুবে পরিবার মন্দিরের অধিকারীহন। এবং পরবর্তীকালে তাদের আত্মীয় পরিবার পাঠকদের ওপর দয়াময়ী দেবীর সেবা ও মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন।

বর্তমানে ভগ্নপ্রায় মন্দিরটির আমূল সংস্কার হয়েছে, ফলে তৎকালীন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনগুলি কালের প্রভাবে মুছে গিয়েছে। তবে এটা বুঝতে অসুবিধা হয়না যে মন্দিরগুলির গঠনে রেখদেউল স্থাপত্য রীতির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। 

স্থানীয় মতে, এখানে দয়াময়ী রূপে অধিষ্ঠিত কালিকা অত্যন্ত জাগ্রত। দীপান্বিতা অমাবস্যা, কৌশিকী অমাবস্যা, নববর্ষে ভক্তদের ঢল থাকে চোখে পড়ার মতন। কথিত আছে, এই ভক্ত সমগমের মধ্যে একদিন উপস্থিত ছিলেন আকবরের সেনাপতি মানসিংহ স্বয়ং।

তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠার পরে রাজস্থান থেকে পুজো নিবেদন করতে এই মন্দিরে আসেন। এই মন্দিরের ভোগের চাহিদাও প্রচুর ও দূর দুরান্ত থেকে ভক্তরা ভোগ সংগ্রহ করতে মন্দিরে এসে হাজির হন। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, মায়ের ডাকেই তাঁরা মন্দিরে আসেন।

তথ্যসূত্র
একাধিক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ এবং ইণ্টারনেট

ছবি
ইণ্টারনেট