রবীন্দ্রনাথের এ ভোজনপ্রীতি প্রভাবিত করেছে বাড়ির ঠাকুরঘরকেও। বিভিন্ন ভোজের নিমন্ত্রণ এবং প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁর মেনু কার্ড সংগ্রহ করেছেন তিনি এবং সেগুলো নিয়ে এসে দেশি ও বিদেশি রান্নার ফিউশন করিয়েছেন ঠাকুরবাড়ির রসুইঘরের ঠাকুরদের দিয়ে।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত মেনু কার্ডগুলো পুনরায় সংগ্রহ করেন ব্রিটিশ শেফ শন কেনওয়ার্দি এবং তাঁর ভালো লাগা রেসিপিগুলোর ওপর গবেষণা করেন। পরবর্তী সময়ে একই উপকরণ ও মসলা ব্যবহার করে সেসব খাবার তাঁর নিজ ক্যাফেতে পরিবেশন করেন, যেন তার স্বাদ ও সুবাস অপরিবর্তিত থাকে।
শুধু সাহিত্য বা শিল্পকলাই নয়, রবীন্দ্রজীবনবোধে খাদ্যরসিকতা একটি বড় দিক! ঠাকুরবাড়ির হেঁশেল একটা সময় বাংলার রান্নার ঘরানার ট্রেন্ড সেট করেছে। রবীন্দ্রনাথেরও নিজের পছন্দের কিছু খাবার ছিল।
চলুন জেনে নেওয়া যাক রবিঠাকুরের পছন্দের খাবার সম্পর্কে।
সোনা মুগের ডাল, তবে তাতে থাকতে হবে শজনে ডাঁটা
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনের জীবনে অনেকেই তাঁর জন্য বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার রান্না করে আনতেন। তবু জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির খাওয়ারের স্বাদ ভুলতে পারতেন না রবীন্দ্রনাথ। সেখানের সোনা মুগের ডাল খেতেন তিনি। তবে তাতে চাই শজনে ডাঁটা। শজনে ডাঁটা ছাড়া রবিঠাকুর সোনা মুগের ডাল পছন্দ করতেন না।
ঠাকুরবাড়ির রান্নার ঘরানা
ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ এমন এক পরিবারে মানুষ হয়েছেন, যেখানে স্পেন, ইতালি, ইংল্যান্ড, ইউরোপের রান্নার প্রভাব ছিল। ঠাকুরবাড়ির রান্নায় বাঙালির চেনা ঘরানার সঙ্গে মিশে থাকত বৈদেশিক বহু দেশের রান্নার প্রভাব। আর সেই হিসেবে রবিঠাকুর নিজেও বহু ধরনের খাবারে নতুনত্ব আনতে চাইতেন।
ঠাকুরবাড়ির ফ্রুট সালাদ
বিভিন্ন দেশের প্রভাব রয়েছে ঠাকুরবাড়ির সালাদ তৈরিতে। শোনা যায়, বাড়ির সবাইকে নিয়ে জমিয়ে বসে মধ্যাহ্নভোজের পর এই ফ্রুট সালাদ খেতে পছন্দ করতেন রবীন্দ্রনাথ।
চা ও শরবত
রবীন্দ্রনাথের প্রিয় পানীয়ের মধ্যে চা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিল। তবে জাপানের চায়ের প্রতি কবিগুরুর আকর্ষণ অনেকটাই বেশি ছিল। অন্যদিকে শরবতের রকমফের নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ। আর সেই কারণেই আসে নিমের শরবতের উদ্ভাবন। তবে আমসত্ত্ব, দুধ ও সন্দেশ ‘মাখা’ও কিন্তু রবিঠাকুরের প্রিয় পদ ছিল।
কাবাব থেকে ইলিশের ঝোল
বিদেশ সফরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখনই যেতেন, তখনই তিনি কোনো না কোনো বেক ফুড বেছে নিতেন। আর তাঁর প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল চিকেন কাবাব নোসি, টার্কি কাবাব, সুরতি মিঠা কাবাব। মাংসের মধ্যে যখন কাবাবে তাঁর মন ছুঁয়ে যেত, তখন মাছের পদকেও পেছনে রাখতেন না তিনি। কাঁচা ইলিশের ঝোল, চিতল মাছের মুঠে, নারকেল চিঁড়ি, আদা দিয়ে মাছের ঝোল ছিল রবিঠাকুরের প্রিয় খাবারের তালিকায়।
ঠাকুরবাড়ির ‘ভাতের কোফতা’
রবিঠাকুরের বাড়ির একটি বিশেষ পদ ছিল ভাতের কোফতা। যার হদিস মেলে ঠাকুরবাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর লেখা বই ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ বইয়ে। এই রেসিপি শুনতে যেমন ভিন্ন, স্বাদেও অপূর্ব। রবিঠাকুরের প্রিয় খাবারগুলোর একটি ছিল এই ভাতের কোফতা।
বিদেশি যেসব পদ পছন্দ করতেন তিনি
চিংড়ির কাটলেট সে যুগে একটি অভাবনীয় পদ ছিল। বিদেশ থেকে আসে ঠাকুরবাড়িতে এই পদের রান্নার জন্য আবদার আসত রবীন্দ্রনাথের তরফে। এ ছাড়া হ্যাম প্যাটিসহ একাধিক খাবার ছিল তাঁর প্রিয়। বাঙালি রান্নার পদ যা মন ছুঁয়ে নিত। বলা হয় ঠাকুরবাড়িতে রবীন্দ্রনাথের জন্য বিশেষভাবে তৈরি হতো এঁচোড় মাংস। পাঁঠার মাংস রান্না তাঁর পছন্দের তালিকায় ছিল। তা ছাড়া ছানার চপ ছিল তাঁর প্রিয় খাদ্য। এ ছাড়া নিরামিষ রান্নার মধ্যে পাঁচফোড়নসহকারে রান্না ছিল তাঁর পছন্দের।
তথ্যসূত্র ও ছবি: ইন্টারনেট