রেশমা নাহার রত্না : তাঁর আর পাহাড়ে ওঠা হল না - Pralipta


পিয়ালী গোস্বামী, হুগলী, ৮ই আগষ্ট ২০২০ :

"স্তব্ধতা উচ্ছ্বসি উঠে গিরিশৃঙ্গরূপে,
উর্ধ্বে খোঁজে আপন মহিমা।
গতিবেগ সরোবরে থেমে চায় চুপে
গভীরে খুঁজিতে নিজসীমা।"
                 - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

রেশমা নাহার রত্না নামটাতেই যেন গরিমা লুকিয়ে আছে। তিনি একাধারে পর্বতারোহী, দৌড়বিদ, সাইকেল আরোহী এবং বিশিষ্ট শিক্ষিকা। ঢাকা শহরের কন্যা। 

এমন উজ্জ্বল মানুষটি ৭ই আগষ্ট সকাল ৯টা নাগাদ ঢাকার সংসদ ভবন এলাকার চন্দিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোড দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় একটি গাড়ির ধাক্কায় তাঁর পথ দূর্ঘটনা ঘটে। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় শহীদ সোহারাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষনা করেন।

মাত্র ৩৩ বছর বয়সী একটি প্রাণ অকালেই নিঃস্প্রভ হয়ে যায়। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশ শোকস্তব্ধ। তিনি কে ছিলেন সে প্রসঙ্গে বহুতথ্য উঠে এসেছে। তাঁর ২০১৬ সাল থেকে পর্বতারোহন শুরু হয় বাংলাদেশের বান্দারবন জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত পাহাড় 'কেওক্রাডং'-এর চূড়া স্পর্শ করার মধ্য দিয়ে। ২০১৮ সালে আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত 'মাউন্ট কিলিমাঞ্জারো' ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত 'মাউন্ট কেনিয়া' অভিযানেও অংশ নেন।

তিনি ২০১৯ সালে ভারতের 'নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং' থেকে উচ্চতর পর্বতারোহন কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে ২৪শে আগষ্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত 'স্টক কাঙরি' পর্বত(৬১৫৩ মিঃ) এবং ৩০শে আগষ্ট 'কাং ইয়াস্তেসে-২' পর্বত (৬২৫০) সফলভাবে আরোহন করেন তিনি। এবং বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন। 

বাংলাদেশি পত্রিকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড মারফৎ তাঁর পরিচিত মানুষদের মুখ থেকে বহু তথ্য উঠে আসে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের যুগ্ম  পরিচালক মেজবাহ উদ্দীন সুমন বলেন, "রত্না ছিলেন কেন্দ্রের 'আশার ইস্কুল' পোগ্রামের সক্রিয় সদস্যা। এইদিন (শুক্রবার) সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে একটি অনলাইন ক্লাস নেওয়ার কথা ছিল। আর ওই দিন ১০টায় ওনার মৃত্যু খবর আসে।" তিনি আরও বলেন, "রত্না এভারেষ্ট জয়ের লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করতেন রীতিমতো।" এছাড়া বাংলাদেশের প্রথম পর্বত প্রশিক্ষক ও পর্বতারোহী মীর শামসুল আলম বাবু জানান, "তিনি বাংলাদেশ মাউন্ট ট্রেনিং ট্রেকিং ক্লাবের সদস্যা ছিলেন, তিনি শিক্ষিকা হওয়ায় শিশুদের মনোজগত ভালোভাবে বুঝতেন, তিনি কোভিড পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়া মারফৎ ক্লাস নিতেন।" আলম বাবু আরও বলেন, "কোভিড পরিস্থিতি না থাকলে এতদিনে আরও সফলতার তকমা ওনার কৃতীতে জমা হত"।

 রেশমা নাহার রত্না তিনি ম্যারাথনেও যোগদান করেছিলেন। তাঁর স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছেন। তিনি এটাও প্রমাণ করেছেন যে শিক্ষকতার সাথে সাথে জীবনে বহু সফলতা জয় করতে হয়। তাঁর মুখে তাঁরই আশার বাণী " দিনের শেষে আমরা কিন্তু পর্বতের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকাটাই ওড়াই"।