Dev diwali: দেব দীপাবলির রোশনাই এবার বাংলাতেও - Pralipta

প্রলিপ্ত ডেস্ক: দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে দেব দীপাবলি। কার্তিক পূর্ণিমায় এই বিশেষ দেব দীপাবলি বারাণসীতে মূলত উদযাপিত হয়। এবার কলকাতায় প্রথমবার আয়োজিত হল দেব দীপাবলি। কলকাতার বাজা কদমতলা ঘাট এদিন দেব দীপাবলি উপলক্ষ্যে সেজে ওঠেছে গঙ্গার তীরবর্তী এলাকা। অগণিত এলইডি আলোকে প্রদীপের আকারে জ্বালিয়ে সংশ্লিষ্ট ঘাটটিকে সাজিয়ে তোলা হয়। চাতালে দেওয়া হয় সুন্দর আলপনা। সাজানো হয় গঙ্গা মায়ের মন্দির। ছিল ভোগ বিতরণ। এর সাথে গঙ্গাবক্ষে আতসবাজির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। বৃন্দাবন থেকে আনা হচ্ছে ভক্তিমূলক সঙ্গীতশিল্পীকে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অনেকে। এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। 


তবে এই দেব দীপাবলি কি? দেব দীপাবলি অর্থাৎ "দেবগণের দিওয়ালি" হল কার্তিক পূর্ণিমার উৎসব যা ভারতের উত্তর প্রদেশের বারাণসীতে উদযাপিত হয়। এটি হিন্দু কার্তিক মাসের (নভেম্বর - ডিসেম্বর) পূর্ণিমায় ও দীপাবলির ঠিক পনেরো দিন পরে হয়। গঙ্গা নদীর নিকটস্থ সমস্ত ঘাটের সিঁড়িতে দক্ষিণ প্রান্তের রবিদাস ঘাট থেকে রাজঘাট পর্যন্ত গঙ্গা ও এর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর সম্মানে দশ লক্ষেরও অধিক মাটির প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। পৌরাণিক ইতিহাস অনুসারে, এ দিন দেবতারা গঙ্গা স্নান করতে পৃথিবীতে অবতরণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। উৎসবটি ত্রিপুর পূর্ণিমা স্নান হিসেবেও পালন করা হয়। দেব দীপাবলি উৎসবে প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা দশাশ্বমেধ ঘাটে পণ্ডিত কিশোরী রমন দুবে (বাবু মহারাজ) ১৯৯১ সালে প্রথমবারের মতো শুরু করেছিলেন। দেব দীপাবলির সময়, গৃহসমূহের সদর দরজা তেলের প্রদীপ ও রঙিন নকশা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। রাত্রে আতশবাজি পোড়ানো হয়, বারাণসীর রাস্তায় সজ্জিত দেবতার শোভাযাত্রা বের করা হয় এবং নদীতে তেলের প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ ভাসানো হয়। এই উৎসবের তাৎপর্য ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক জনপ্রিয়তার কারণে এটি বর্তমানে মির্জাপুরের মতো নিকটবর্তী জেলাগুলিতেও উদযাপন করা শুরু করেছে। এবার দেব দীপাবলির প্রভাব কলকাতাতেও দেখা যাচ্ছে। 


বারাণসীতে এই দেব দীপাবলি পালনের পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। পুরাণ মতে বিশ্বাস যে মহাদেবের শহর হল বারাণসী। এই শহর আবার পবিত্র ঘাটের শহর হিসেবেও পরিচিত। আর মহাদেব ত্রিপুরাসুরকে বধ করার জন্য কার্তিক পূর্ণিমার দিনে প্রদোষকালে অর্ধনারীশ্বর রূপ ধারণ করেন। এই পৌরাণিক কাহিনিকে সামনে রেখেই প্রতি বছর এই প্রদোষকালে বারাণসীর কাশীর রবিদাস ঘাটথেকে লেরাপ রাজঘাট পর্যন্ত কয়েক লক্ষ প্রদীপ জ্বালানো হয়ে থাকে। অন্য একটি বিশ্বাস এই দিনে ভগবান বিষ্ণু মৎস্য অবতার গ্রহণ করেছিলেন। দেব দীপাবলির দিন ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীকে বিশেষ নিয়ম মেনে পুজো করা হয়। 


কথিত আছে, এই দিনে দেবতারা পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের স্বাগত জানাতে পৃথিবীতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। শাস্ত্র অনুসারে এই দিন সন্ধ্যায় শিব মন্দিরেও প্রদীপ জ্বালানো হয়। শিব মন্দির ছাড়াও, অন্যান্য মন্দিরে, রাস্তার মোড়ে এবং অশ্বত্থ গাছ এবং তুলসী গাছের নীচে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি এই দিনে ভগবান শিবকে দর্শন করার এবং তাঁর পূজা করার প্রথাও রয়েছে। এই প্রথায় মানুষ জ্ঞান ও সম্পদ লাভ করে। তার সঙ্গে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং আয়ু বৃদ্ধি পায়। 


এবছর বারাণসীতে এই উৎসব বাড়তি মাত্রা পেতে চলেছে। এবার উত্তর প্রদেশ পর্যটন দফতর, বারাণসী পুর নিগম এবং কাশী মন্দির কর্তৃপক্ষ মিলে মেগা আয়োজন করছেন উৎসবের। কাশীর ৪৮টি ঘাটে বিশেষ আলোক-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের অঙ্গ হিসাবেই গঙ্গা-মহোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গঙ্গাবক্ষে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

 তথ্যসূত্র ও ছবি: ইন্টারনেট