চন্দননগর শহরের হাটখোলা জগন্নাথ মন্দির - Pralipta

মন্দিরের ছবি

অর্নিবাণ সাহা:

প্রতিষ্ঠা বর্ষ: - 
আনুমানিক ২৫o - ৩oo বছর |

প্রতিষ্ঠাতা: - 
বৈষ্ণব ধর্মের অন্তর্গত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অনুগামীরা | জানা যায় প্রাথমিকভাবে তারা হোগলা পাতার ছাউনি দিয়ে একটি ছোট ঘর করে তাতেই প্রভুর মূৰ্তি রেখে পূজা ও নামগান করতেন | পরবর্তীকালে বহু বছর পর মার্টি ও খর দিয়ে দালান সহ একটি ঘরে মন্দির করা হয়|

মন্দিরের অন্দরমহল

অধিষ্ঠাত্রী দেব / দেবী: - 
নিমকাঠের জগন্নাথ (তিনটি মূর্তি), বলরাম (দুর্টি মূর্তি), সুভদ্রা (দুর্টি মূর্তি), জগন্নাথের শয্যা, শ্বেতপাথরের সিদ্ধিদাতা গনেশ, বাবা সড়ভূজা, বংশীধারী কৃষ্ণ মূর্তি, নারায়ণ শীলা | 
এছাড়াও গর্ভগৃহের বাইরে রসুই খানার দিকে মার্বেলের ছোট এক চূড়া বিশিষ্ট বেদীতে পাঁচটি কষ্ঠি পাথরের শিবলিঙ্গ, তিনটি শ্বেত পাথরের শিবলিঙ্গ ও দুর্টি ত্রিশুল রয়েছে | তুলনা মূলকরত আরো একটি ত্রিশুল একটি থামের সাথে দন্ডায়মান অবস্থায় রয়েছে |

মূর্তি

মন্দিরের দেওয়াল

ঠিকানা: -
হাটখোলা, দয়ের ধার, চন্দননগর |

বিশেষত্ব: - 
মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতো দুর্টি সিংহ মূৰ্তি রয়েছে |  মন্দিরটিতে একত্রে সাতটি দেব ও একটি দেবীর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠিত রয়েছে | স্নানযাত্রার দিন ও রথের দিন অন্নকূট তিথিতে এখানে বিশেষ পূজা হয় | নবকলেবরের দিনে প্রতিবছর জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ নতুনভাবে রং করে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয় | 
এই মন্দিরে পারিবারিক কিছু অসুবিধার ফলে নিত্য পূজা ব্যাহত হবার কারণে স্থানান্তরিত হওয়া বিভিন্ন বাড়ির বিভিন্ন দেব-দেবী নিত্য পূজিত হন । তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রথেরসড়ক সাহা পরিবারের সুপ্রাচীন কূলদেবী মঙ্গলচন্ডিকা । 

রথ

লোকগাথা: - 
এই মন্দির সম্পর্কিত কোন লোকগাথা বা জনশ্রুতি না থাকলেও প্রধান পুরোহিতের থেকে জানা গেল যে, পূর্ববর্তী সময়ে মুসলিম ও বিভিন্ন ইউরোপের শাসকদের দ্বারা এই মন্দিরে প্রভুত ক্ষতি ও লুঠ৩রাজ হয়েছে বহুবার | এছাড়া অদূর অতীতে প্রায় ১৯৪০ সালে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অনুগামীদের মধ্যে এক প্রসিদ্ধ ও জনৈক বাবাজী এখানে তাঁর আস্তানা গড়ে তোলেন | প্রভুর সেবা নামগানের সাথে সাথে সন্ধ্যার পর মন্দিরের দালানে চলত তাঁদের আড্ডা ও জুয়া খেলা | কিছুদিন পর এলাকার বাসিন্দারা তীব্র প্রতিবাদ করায় মন্দিরের স্বল্প দূরে অবস্থিত বর্তমানের জগন্নাথ ঘাট দিয়ে বাবাজী নৌকায় করে মন্দিরের প্রায় সমস্ত গহনা লুঠ করে পালিয়ে যায় |

রথের মুকুট

নবনির্মাণ / সংস্করণ: - 
১৯৫০ এর দশক নাগাদ শ্রী বংশধির পান্ডা ও বর্তমান প্রধান পুরোহিত শ্রী মধুসুদন পাত্র মহাশয়ের দাদু শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র পাত্র মহাশয়ের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান জোগাড় করে পাকাপাকিভাবে একটি দালান ও গর্ভগৃহ সহ মন্দিরটি নবনির্মাণ করেন | পরবর্তীকালে ২০০৫ সালে শহরের অন্যতম নামকরা ক্যাটারার সংস্থা "নবীন ক্যাটারার" (মূল কাঠামো ও ছাদ ঢালাইয়ের খরচ দেয়) ও অন্যতম প্রসিদ্ধ ও প্রাচীনতম ডেকরেটর্স "ফ্ৰেঞ্চ ডেকরেটর্স" (মার্বেলের খরচ দেয়) এর যৌথ সহায়তায় ও কিছু অনুদান জোগার করে মন্দিরটিকে সম্পূর্ণভাবে নবনির্মাণ করা হয় পুণরায় |

সামনের গঙ্গার ঘাট

বর্তমান অবস্থা: - 
এখানে দুবেলা (সকালে অন্নভোগ সহযোগে) প্রভুর পূজা ও নামগান হয় | বহুবছর আগে মন্দির পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠিত হলেও সেই ট্রাস্টের কর্মকর্তারা (একমাত্র শ্রী বিমল কুমার দাস ছাড়া) প্রায় সকলেই পরলোক গমণ করায় ট্রাস্টের কোন অস্তিত্ব বর্তমানে নেই | অনেক চেষ্টা করেও কোন সরকারী সাহায্য পাওয়া যায় নি | বর্তমানে ভক্তদের অনুদান ও মাসিক চাঁদার দ্বারা নিত্য খরচ বহন করা হয়|

তথ্যসূত্র :-
ক্ষেত্রসমীক্ষার মাধ্যমে মন্দিরে তিন পুরুষ ধরে পূজা করে চলা বর্তমান প্রধান পুরোহিত শ্রীযুক্ত মধুসূদন পাত্র (তিনি প্রধান পুরোহিত হিসেবে রয়েছেন ৮ - ১০ বছর) মহাশয়ের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যাবলি

ক্ষেত্রসমীক্ষক :- 
শ্রী অনির্বাণ সাহা

সহযোগিতায় :- 
শ্রী অজিৎ মুখোপাধ্যায়

চিত্র :- 
প্রলিপ্ত টিম