Gangotri Dham:কথায় গল্পে গঙ্গোত্রীর পথে - Pralipta

সমীরণ চন্দ্র বনিক: আজ বলবো গঙ্গোত্রী ধাম দর্শনের কথা। গতবছর,২৩/০৯/২৩, শনিবার, জানকীচটীর গেস্ট হাউস থেকে সন্ধ্যের একটু আগে, উত্তরকাশীতে কালি কমলির ধর্মশালায় উঠেছি। তার আগের দিন (২২/০৯/২৩) যমুনোত্রী দর্শন করেছি। 

উত্তরকাশীর কালি কমলির ধর্মশালাটা আমাদের বেশ ভালো লেগে গিয়েছিলো। সরাসরি গাড়ি ভেতরে ঢুকে যায়। চারিদিকে দোতলা বাড়ি। মানে অতিথিদের থাকার ঘর। মাঝখানে বিশাল উঠোন। গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো চিন্তাই নেই। একেবারে, উত্তরকাশীর মূল মার্কেটের শুরুতেই এই ধর্মশালা। তারপরে যত এগোনো যাবে দোকানের সংখ্যাও তত বাড়বে। কি বিশাল মার্কেট। কত দোকান। কি না পাওয়া যায় সেখানে। এক একটা দোকানে প্রচুর স্টক। খুচরো, পাইকারী সব রকম কেনা বেচা হয়। আমরা জলের বোতল কিনেছিলাম পাইকারী দরে, বোতলপিছু ১২.৫০ হিসেবে। এখান থেকেই বোধহয় পুরো উত্তরকাশী জেলার সমস্তরকম সামগ্রীর চালান হয়। প্রচুর মানুষও রয়েছেন বাজারে, ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছেন। মনে হচ্ছিলো হাতিবাগান বা গড়িয়াহাটে রয়েছি। 



আর ধর্মশালাটা একেবারে গঙ্গার ধারে। পাশেই মনিকর্নিকা স্নানের ঘাট। আমরা আগের দিন সন্ধ্যের অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। অফিসিয়াল কাজকর্ম সেরে, ঘরের দখল নিয়ে, চারজনই চলে গেলাম গঙ্গাস্নানে। 

জলের গতিবেগ খুব বেশী। মোটা লোহার চেন রয়েছে, ধরে স্নান করার জন্য। দিন দশেক আগেই বেনারসে বেড়াতে গিয়ে দশাশ্বমেধ ঘাটের সন্ধ্যারতির ভিডিও রেকর্ডিং করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম গঙ্গায়। খুব বড়ো মাপের দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি বাবা বিশ্বনাথের কৃপায়। শুধু বাঁহাতের কড়ে আঙুলটা থেঁতলে যাওয়া ছাড়া আর কিছু হয়নি। গঙ্গার ধারে যে সমস্ত স্থানীয় মানুষরা দাঁড়িয়ে থাকেন, বা নৌকার মাঝি মাল্লারা দাঁড়িয়ে থাকেন, জলে পড়ার সাথে সাথে তারাই নিমেষের মধ্যে আমাকে জল থেকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়েছিলেন। তারা সেদিন সেই ভাবে আমাকে উদ্ধার না করলে, তাহলে হয়তো এই প্রতিবেদন লেখা আর জীবনে হতো না। তাদেরকে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা জানাইনি। শুধু বাবা বিশ্বনাথের কাছে তাদের সবার মঙ্গল কামনা করেছিলাম।  
সাথেই সাথেই একজন স্থানীয় ডাক্তারবাবুকে পেয়ে যাওয়ায় সেযাত্রায় প্রাথমিক চিকিৎসাও পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই মনের মধ্যে প্রচুর ভয় ছিলো। জলে নামতেই ইচ্ছে করছিলো না। দেবুদাই বারবার আমাকে জলে নামতে সাহস যোগাচ্ছিলেন। আমাদের চারজনের মধ্যে দেবুদা আর সোমনাথ তো বটেই বর্ষীয়ান ৭২ বছর বয়সী অজিতদাও গঙ্গা স্নান করতে নেমে গিয়েছিলেন। এখানে গঙ্গাস্নানটা কি নিছকই কি পূণ্য অর্জন, নাকি অ্যাডভেঞ্চার, নাকি একটু নতুনত্বের স্বাদ নেওয়া, জানিনা। বেড়াতে গিয়ে অনেক জায়গাতেই দেখেছি, অনেকে না হলেও বেশ কিছু মানুষ নদী বা সমুদ্র (পুরী বা দীঘার কথা বাদ দিয়ে ) বা ঝর্নাতে ফাঁক পেলেই নিজের মতন করে স্নানটা সেরে নেন। সম্প্রতি পুরুলিয়া বেড়াতে গিয়েও এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছি। আমি অবশ্য তাদের দলে পড়ি না।  



কিন্তু এখানে গঙ্গায় স্নান করার লোভটা ক্রমশ যেন আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরছিলো। টেনে নিয়ে যাচ্ছিল জলের দিকে। উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে এলেই গঙ্গা স্নানের লোভটা যেন সংবরণ করা যায় না। কি এক দুর্নিবার আকর্ষণ! শেষে সবাই নামছে দেখে দুরু দুরু বুকে, লোহার মোটা শেকলটাকে আঁকড়ে ধরে, কোনো রকমে দুটো ধাপ জলের মধ্যে নেমে হাঁটু জলেই স্নান সেরে নিলাম। কোনো ঝুঁকি নিই নি। তবে স্নানের পর খুব ভালো লাগছিল। কেন জানিনা নিজের মধ্যে একটা পবিত্র ভাব জেগে উঠেছিল। গঙ্গা তো পতিত পাবনী, কলুষ হারিনী। হয়তো আমার মধ্যে যে কলুষতা, যে মলিনতা আছে গঙ্গায় স্নানের সাথে সাথে তা ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল। নিজের মধ্যে যেন একটা উৎফুল্ল ভাব চলে এলো। একটা অপার্থিব অলৌকিক স্বর্গীয় অনুভূতি যেন আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। নিজেকে বেশ ঝরঝরে এবং তরতাজা লাগছিল।
ওই ঠান্ডায় গঙ্গা জলে স্নান করেও কিন্তু সেই রকম শীত অনুভূত হচ্ছিল না। 

যাইহোক স্নান সেরে, জামাকাপড় পরে চলে গিয়েছিলাম, ধর্মশালা থেকে এক কিলোমিটার দূরে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে সন্ধ্যারতি দেখতে। সেখানে যেতেই দেখলাম আরতি আগেই শুরু হয়ে গেছে। অনেক মানুষ এসেছেন। ইতিমধ্যে যে যার পজিশন নিয়ে নিয়েছেন। আমরা ওরই মধ্যে একপাশে, একটু জায়গা বের করে, সেখানে দাঁড়িয়ে আরতি দেখলাম। উত্তরাখণ্ডের মহিলা পুলিশদের দেখলাম উপস্থিত জনতার ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখতে, নিয়ন্ত্রণ করতে। তাদের ওপরেই দেখলাম সম্পূর্নভাবে শৃঙ্খলা রক্ষার ভার। কিন্তু মাঝে মাঝেই তারা মন্দিরের মূল গেটটাকে, জনতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে, আড়াল করে দিচ্ছিলেন, ফলে অপেক্ষমাণ মানুষের আরতি দেখার বিঘ্ন ঘটছিলো। 

যাইহোক, ভালোই লাগলো আরতি। আরতি শেষে দেবতার দর্শন ও প্রসাদ পেলাম লাইন দিয়ে। এখানেআরো কয়েকটি মন্দির রয়েছে। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের পূর্ব দিকে রয়েছে একটা বেশ উঁচু মন্দির। মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশের পথ সাধারণ দরজার মত হলেও, গর্ভগৃহের ছাদটা বেশ উঁচু। মাঝখানে একটি বিশাল প্রচুর ত্রিশূল প্রোথিত আছে। ত্রিশুলে গায়ে ছোট ছোট রঙিন কাপড় বাঁধা রয়েছে। নিচেও কিছু মূর্তি আছে দেখলাম। সেসব দেখে শুনে প্রণাম সেরে বেরিয়ে এলাম।



ধর্মশালায় খাবার কোনো ব্যবস্থা নেই। শুনেছিলাম, পরদিন থেকে চালু হতে পারে। জিজ্ঞাসা করে চলে গেলাম, কাছেই বিড়লা গলি দিয়ে, বাস স্ট্যাণ্ডের রাস্তায়। সেটাও একটা মার্কেট। রাস্তার দুধারে রকমারি দোকান। তবে এখানে রাস্তা খুব চওড়া৷ কাছেই বিড়লাদের ধর্মশালা আছে। বাইরে থেকে ভালোই লাগলো। 

অনেক খাবারের দোকান আছে। সেখানকারই একটা রেস্টুরেন্টে রাতের খাওয়া সেরে নিলাম। 

পরদিন ( ২৪/০৯/২৩ ) ছিলো চার ধাম দর্শনের দ্বিতীয় ধাম, গঙ্গোত্রী ধাম দর্শনের দিন। তাই সকাল ৮.০০ নাগাদ কালি কমলির ধর্মশালা থেকে বেরিয়ে রওয়ানা হলাম দ্বিতীয় ধাম, গঙ্গোত্রী ধাম দর্শনে। 

যাত্রাপথে বিরতি দিয়ে, প্রাত: রাশ সেরে নিয়েছিলাম। তারপর আরও কয়েকবার বিরতি নিতে হয়েছে, পথের নৈসর্গিক দৃশ্যের সৌন্দর্য শুধুমাত্র চোখের ক্যামেরায় নয়, যান্ত্রিক ক্যামেরায় সেইসব নয়নমনোহর দৃশ্যাবলি বন্দী করার জন্য। 

আমাদের যাত্রাপথের বেশ খানিকটা পথ ভাগীরথী আমাদের ডান দিকেই ছিলো যাত্রাপথের সঙ্গী হয়ে। অনেক পরে ভাগীরথী আমাদের বাঁদিকে চলে আসে এবং আমাদের মধ্যের দূরত্বও ( উচ্চতাজনিত কারণে ) বেড়ে যায়৷ সে কখনো থাকে নজরের বাইরে, কখনো বা তাকে দেখতে পাই অনেক উঁচু থেকে ক্ষীনতোয়া স্বচ্ছ সলিলার মতন। 



পথের দুই পাশের দৃশ্যাবলিকে শব্দের বন্ধনে আবদ্ধ করে আপনাদের সামনে যে তুলে ধরবো, সেই শব্দ ভাণ্ডার আমার নেই। শুধুই দুচোখ ভ'রে দেখা আর উপভোগ করা। 

মাঝে অনেক দূরে দুই পাহাড়ের মাঝে বরফাবৃত শৃঙ্গ চোখে পড়লো, কি নাম জানতে পারিনি। একজন বললেন নীলকন্ঠ। তবে আমি জানিনা। তাই নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। ভূগোলে তো চিরকাল গোল্লাই পেয়ে এসেছি। 

পথে অনেক জায়গার মধ্যে একটি জায়গার নাম অনেক দিন মনে থাকবে। জায়গাটার নাম হরসিল। 
মাঝে একটা সুন্দর ব্রীজ আছে, ঝালা ব্রীজ, ভাগীরথীর ওপরে। নীচের রিভার বেডটা বেশ চওড়া। কিন্তু নীচ দিয়ে খুব সামান্য জায়গা নিয়েই তীব্র বেগে বয়ে চলেছে ভাগীরথী। তবে নদীবক্ষের বেশীরভাগই বোল্ডার আর বালিতে ভর্তি 
জল খুব কম। হয়তো বর্ষাকালে এর চেহারাই পাল্টে যায়। 

হরসিলের আসল বৈশিষ্ট্য হলো, আপেল বাগান। রাস্তার ধারে ধারে, পাহাড়ের ঢালু জমিতে আপেল বাগান চোখে পড়েছিলো। অনেক গাছ। এখন আপেলের মরশুম শেষ হতে চললেও, আপাত দৃষ্টিতে ওপর থেকে দেখে মনে হল গাছে এখনো প্রচুর ফল ধরে আছে। নেমে দেখবার বা চেখে দেখবার লোভ সংবরণ করে গঙ্গোত্রী ধামের দিকে রওয়ানা হলাম। মনকে প্রবোধ দিলাম, আগে চার ধাম দর্শনের দ্বিতীয় ধাম দর্শন করে নিজেদের মনের উদ্দেশ্য পূরণ করি। তারপর ফেরার পথে হাতে সময় নিয়ে আপেল বাগানের সাথে আদিখ্যেতা করা যাবে। 



মন্দিরে পৌঁছালাম দুপুর ১.৩০ মিনিট নাগাদ। গাড়ী মন্দিরের দু কিলোমিটার আগেই পার্কিং এরিয়াতে পার্কিং করতে হলো পুলিশ ও প্রশাসনের নির্দেশে। 
আমরা হেঁটেই চললাম মন্দিরের দিকে। 

প্রধান প্রবেশদ্বার ( যেটার সংস্কারের কাজ চলছে, মূল মন্দিরের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য ) দিয়ে কয়েক পা এগোতেই চেক পোস্ট। আমাদের চার ধাম যাত্রার রেজিস্ট্রেশনের সফট কপি দেখাতে হলো। স্ক্যান করে প্রিন্টেড কাগজ হাতে ধরিয়ে দিলো। 

সেটাই আবার পাশে দাঁড়ানো এক পুলিশ কর্মীর হাতে দিতে, তবেই মন্দিরের দিকে এগোবার অনুমতি পেলাম। 

পথ খুব চওড়া না হলেও কংক্রিটের রাস্তা। চড়াই-উতরাই নেই। রাস্তা খুবই ভালো। কোথাও কোথাও সামান্য উঁচু নীচু, তবে তা তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না পদযাত্রীদের ক্ষেত্রে। 

হ্যাঁ, এখানে হুইল চেয়ারের বন্দোবস্ত আছে, সরকারী রেট, আসা-যাওয়া ৪৫০ টাকা। তবে অনেক হুইল চেয়ার চালককে দেখলাম। কে যে সরকারী, আর কে যে নয়, বোঝা মুশকিল। কানের কাছে আরামে নিয়ে যাতায়াত করার জন্য তারা অনেকেই সরকারী রেটের থেকে অনেক কম টাকা চাইছেন! ব্যাপারটা বোধগম্য হলো না ঠিক। তবে পার্কিং এরিয়া থেকে হুইল চেয়ার নিলে সরকারী রেটেই বোধহয় নিতে হবে। মাঝরাস্তার রেট বোধহয় আলাদা। মন্দির থেকে ফেরার সময় একজন নাছোড়বান্দা হুইল চেয়ার চালক কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছিলো না। আমিও ওর কথার কোনো জবাব না দেওয়াতে অনেকক্ষণ পর রণে ভঙ্গ দিলো। 



মন্দিরের যাওয়ার পথের দুপাশে, অনেক দোকান, কোনোটা পুজোর ডালি বা পুজোর উপকরণের কোনোটা বা খাবারের। কোনোটায় আবার মন্দিরে আসা দর্শনার্থীদের কথা ভেবে টুকিটাকি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। থাকার হোটেলও আছে বেশ কয়েকটা। 

যাইহোক মূল মন্দিরের প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করে মন্দিরের চাতালে পা রাখলাম। খুব বড়সড় না হলেও মাঝারি আকারের চাতাল। বাঁদিকে মন্দির। পাহাড়ি অঞ্চলের মন্দির যেমন হয়। পাথরের তৈরি। ধবধবে সাদা রং করা। খুব একটা উঁচু নয়। ছাদে বেশ কয়েকটা সোনালী চূড়া নজরে এলো। সোনার হলে আশ্চর্য হব না! তবে মন্দিরের ভীত বেশ উঁচু, সিঁড়ি আছে ওঠার। 

পুজো দেবার লাইন পড়েছে। লাইনে ভীড় আছে, তবে খুব একটা নয়। আমরা জনা পঞ্চাশেক লোকের পেছনে লাইন দিয়ে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিটের মধ্যে পুজো দিতে পারলাম। পুজোর সামগ্রী আগেই কিনে নিয়েছিলাম, প্রবেশ পথের আগের দোকান থেকে। সেই দোকানেই জুতো রেখে এসেছি। কারণ মূল মন্দিরে জুতো পরে প্রবেশ করা যায় না। এটা তো খুবই সাধারণ বিষয়। 



পুজো দেওয়ার পর পাশের সিঁড়ি দিয়ে খানিকটা নীচে নেমে ভাগীরথীর সাথে দেখা করতে গেলাম। দুপাশের সবুজ পাহাড় যেখানে মাটিতে মিশেছে, সেখান থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এসে তীব্র গতিতে সে এগিয়ে চলেছে। রিভার বেড বেশ চওড়া। প্রচুর ছোট বড়ো বোল্ডার রয়েছে নদীর বুকে, নদীতে প্রচন্ড স্রোত। জলের গভীরতা কম, কিন্তু তীব্রতা বেশী। কাউকে স্নান করতে দেখলাম না। সেখান থেকে দুই পাহাড়ের মাঝে বরফাবৃত তিনটি শৃঙ্গ চোখে পড়লো। কি নাম জানিনা। নাম পরে দেখা যাবে, আগে তো চোখ জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চুটিয়ে উপভোগ করে নিই। 

এই চাতালটায় আরও কিছু মন্দির আছে। মূল মন্দিরে পুজো দেবার পর, কেউ কেউ এইসব মন্দিরে পুজো দিচ্ছেন। সুন্দর সুন্দর ধুতি আর পাঞ্জাবী পরা কয়েকজন পাণ্ডা বা পুরোহিত টাইপের লোকজন ঘোরাঘুরি করছে। তারা এইসব ছোট মন্দিরগুলিতে পুজো দিতে সাহায্য করে থাকেন বা বেশী ভক্তিপ্রবন মানুষেরাই এদের সাহায্য নেন। চাতালের দুই জায়গায় দেখলাম সেইরকম দুজন পুরোহিত, দুই পরিবারের মন্দিরে আগত কয়েকজনকে নিয়ে পুজো, যাগযজ্ঞ ইত্যাদি করছেন। 



কিছুক্ষণ ভাগীরথীর গর্জন শুনে আর এইসব যাগযজ্ঞ দেখে মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। পুণ্যার্থীদের আসার বিরাম নেই। প্রতিদিন কত মানুষ এই মন্দিরে আসেন। নানা বয়সী মানুষ, সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষ, নানা রাজ্যের মানুষ, নানা ভাষাভাষীর মানুষ। সবারই লক্ষ্য গঙ্গামাতাকে দর্শন করা, পুজো দেওয়া। কত মানুষ যে কত আশা নিয়ে এই মন্দিরে আসেন, দেবতার কাছে তার মনের কথা বলেন। মনের গভীরে একটাই বিশ্বাস হয়তো দেবতা তার কথা শুনবেন, তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন। মানুষের জীবন সমস্যাসঙ্কুল। প্রতিনিয়ত তাকে নানা সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। কখনো কখনো সমস্যা যখন তীব্র হয়ে ওঠে, যখন মানুষের কাছে আর কোনো পথ খোলা থাকে না, সব পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন শুধুমাত্র একটা পথই খোলা থাকে, সে পথ দেবতার মন্দিরের পথ। তার কাছে সবাই যেতে পারে, জানাতে পারে তার মনের কথা। মানুষের বিশ্বাস, দেবতা নিশ্চয়ই তার কথা শুনবেন এবং তার সমস্যার সমাধান হবে। আবার কেউ কেউ আসেন, তীর্থ করতে, দেবতাকে দর্শন করতে, পুণ্য অর্জন করতে। দেবতার কাছে সবার অবারিত দ্বার। তার কাছে সবাই সমান। প্রতিদিন কত দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন কতশত কিলোমিটার পথ পেরিয়ে, কত কষ্ট সহ্য করে, কত পরিশ্রম করে, কত কৃচ্ছসাধন করে মানুষজন এই যে দেবতার মন্দিরে এসে তাদের মনস্কামনা জানিয়ে যান। দেবতা তাদের মনস্কামনা নিশ্চয়ই পূর্ণ হয়। নাহলে বছরের পর বছর ধরে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থী এভাবে দেবতার মন্দিরে ছুটে আসতো না। 

মন্দিরের বাইরে এসে, যে দোকান থেকে পুজোর ডালি নিয়েছিলাম, সেই দোকানে এসে জুতো পরে নিলাম। আমরা চার জন এক সাথে এলেও ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিলাম, মন্দিরে প্রবেশের পরেই। তবে পুজো দেবার সময় আমরা তিনজন এক সাথে পুজো দিলাম। সর্বকনিষ্ঠ সদস্য সোমনাথ, মাঝখানে উধাও হয়ে গিয়েছিলো, পরে শুনলাম, পুজো দেবার আগে মাথায় গঙ্গাজল ছোঁয়ানোর জন্য গঙ্গায় চলে গিয়েছিলো। ও পুজো দিলো সবার শেষে। পুজো দেবার পরেই আবার চারজন ছিটকে গেলাম চারদিকে। 


আমি আমার মত করে মন্দির, গঙ্গা, দোকানপাট, মানুষজন ইত্যাদি দেখতে দেখতে গাড়ীর কাছেই যাচ্ছিলাম। ভাবছিলাম দুপুরের খাবারটা যে কোথায় খাবো! সেই সকালে প্রাত:রাশ সেরেছি ম্যাগী দিয়ে। আমি পুরো ট্যুরেই হালকা অথচ তেল মশলা কম আছে, এমন খাবার খাবো বলেই অনেক আগেই পরিকল্পনা করে নিয়েছিলাম। সকালের দিকে ভেজ ম্যাগী বা ম্যাগীসেদ্ধই খেতাম। দুপুরেও পছন্দসই খাবার না পেলে এই ম্যাগীই খেয়ে নিতাম।এইজন্য আমাকে আমার বন্ধুরা আওয়াজও দিয়েছে। তাতে আমি কর্নপাত করিনি। 

এখানে এসেছিলাম ১.৩০ নাগাদ এখন ৩.০০ টে পার হয়ে গেছে । ক্ষিদেটাও চাগাড় দিয়ে উঠেছে। কি যে করবো তাই ভাবছি। একবার ভাবলাম, উত্তরাখণ্ডের সর্বত্র ( আমাদের উত্তর বঙ্গেও তাই) সব দোকানে ম্যাগী পাওয়া যায়। কোনো অভাব নেই ম্যাগীর। হালকা অথচ স্বাস্থ্যকর খাবার, আমার মতে। তাই ম্যাগী খেতেই বেশী পছন্দ করি। ভাবলাম, ম্যাগীই খেয়ে নিই। তারপর ভাবলাম না, সেটা ঠিক হবে না , চারজন এক সাথে পথে নেমেছি। পুরোটা পথ এক সাথেই চলবো। সেখানে নিয়ম ভঙ্গ করা উচিৎ নয়। 

খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির ব্যাপারে আমাদের দলের তৃতীয় বয়স্ক সদস্য, ৪৫ বছর বয়স, দেবুদা, মানে দেবজ্যোতি গঙ্গোপাধ্যায়ই সিদ্ধান্ত নেন, সবার সাথে আলোচনা করে। তাকে ফোনে না পেয়েই যত চিন্তার উৎপত্তি। আর দুজন সদস্য, সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য, অজিতদা মানে অজিত কুমার সাহা, আর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য, সোমনাথ, যার কথা আগেই বলেছি। কাউকেই ফোনে পাচ্ছি না। কেউ ধরছেন না, কারও বা ফোন নেটওয়ার্ক অঞ্চলের বাইরে। 

কি করবো ভাবতে ভাবতে বড়ো রাস্তার দিকে এগিয়ে চলেছি। পথের দু'ধারে নানারকমের দোকান। খাবারের দোকানগুলোতে এই সময় ভীড়টা বেশী। রকমারি খাবার পাওয়া যায়, তার উল্লেখ তাদের দোকানের বোর্ডে রয়েছে। কিন্তু কেমন হবে কে জানে! তবে পথের খাবারের ক্ষেত্রে আগে থাকতে গুণমান বিচার করা যায় না। কিন্তু আমি একটা নীতি অনুসরণ করি, এই বিষয়ে। যে খাবারের দোকানে ভীড় বেশী, তার মানে এটা চালু দোকান, তার মানে এই দোকানের খাবার একেবারে মুখে দেবার মত হবে না, তা হতে পারে না। 

যাইহোক নানা কথা ভাবতে ভাবতে এগোচ্ছিলাম, হঠাৎ কানে এলো দেবুদার গলা, এই সমীরণদা, এদিকে আসুন৷ কন্ঠস্বর লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখি, পথের বাঁদিকে একটা রেস্টুরেন্টে দেবুদা বসে আমাদের অপেক্ষায়। দোকানে খদ্দের তো আছেই, আছে একটা টিভিও। তাতে ইন্ডিয়া আর অস্ট্রেলিয়ার ওয়ান ডে ম্যাচ চলছিলো। বুঝতে পারলাম, দেবুদা এক ঢিলে দুই পাখি মারার জন্যই এই রেস্টুরেন্টটা বেছে নিয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের দলের বাকি দুজনকেও ধরা গেলো। কারণ, মন্দিরে আসা যাওয়ার রাস্তা একটাই। 

কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্ডার অনুযায়ী খাবার টেবিলে চলে এলো। দেবুদার চোখ টিভির দিকে। আমি দেবুদার উল্টো দিকে, সুতরাং টিভিতে কি হচ্ছে ভালো করে বুঝতে পারছি না। বোঝার দরকার আছে বলেও মনে করছি না। সবাই যে যার খাওয়ায় মত্ত। দেবুদা খাচ্ছেন আর টিভি দেখছেন। আমি আমার প্রার্থিত মশলা ধোসা পাওয়ায় তাতেই মনোনিবেশ করলাম। 

গাড়ী ছাড়লো বিকেল ৩.৪৫৷ মিনিট নাগাদ। হরসিলে যখন পৌছালাম, তখন বিকেল পাঁচটে। দিনের আলো তখন কমতির দিকে। আকাশটা হালকা মেঘের চাদরে ঢাকা। সূয্যিমামাকে বা তার ছটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। মৃদুমন্দ বাতাসে ঠান্ডা হাওয়ার শিরশিরানি। আমাদের দুর্গাপুজোর পর যেমন হালকা শীতের আমেজ থাকে সেরকম। 

যাইহোক হরসিলে গাড়ী থেকে নেমে, পাহাড়ের ঢালু পথ দিয়ে কয়েক পা নেমেই দেখলাম, আপেলের বাগানে ঢুকে পড়েছি। চারিদিকে শুধু নীচু নীচু ফলন্ত আপেল গাছ। গাছের ডালে ডালে আপেল ঝুলে আছে, কখনো একা, কখনো দোকা, কখনো বা দলবেঁধে। 

এত সুন্দর অনূভুতি হচ্ছিলো, যে কি বলবো। আজ থেকে বারো বছর আগে শীতকালে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে, পত্রপুষ্প, ফলহীন শূন্য, রিক্ত আপেল গাছগুলো দেখে বড্ড হতাশ হয়েছিলাম। যদিও জানতাম, শীতকালে আপেল গাছগুলো তার শুকনো ডালপালাগুলো শূন্যে মেলে দিয়ে অসহায়ের মতন, ভূতের মতন দাঁড়িয়ে থাকে। খুব যে হতাশ হয়েছিলাম, তা নয়। তবে আপেলভর্তি গাছ দেখতে পেলে ভালো লাগতো। কিন্তু শীতকালে তো তা হবার নয়। 

যাইহোক, বারো বছর আগের দু:খটা ঘুচিয়ে দিলো হরসিল। যদিও ভারতের আরও জায়গায় আপেলের বাগান আছে জানি, সে সব বাগান দেখার সৌভাগ্য আমার এখনো হয়নি। তাই হরসিলই আমার সব আক্ষেপ,সব হতাশা মুছে দিলো। কি যে সুন্দর অনুভূতি হচ্ছিলো বলে বোঝানো যাবে না। মনের মধ্যে একরাশ সুখ, তৃপ্তি আর আনন্দ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। বয়সটা যেন কমে যেতে চাইছে। মন বলছে, তুমি ওই আপেল গাছে ওঠো, আপেল পেড়ে খাও। ছোটবেলায় যেমন আম গাছে উঠে, আম পেড়ে খেতে সেরকম। কিন্তু এখন তো আর সে বয়স নেই, যে গাছে উঠতে পারবো। যদিও আপেল গাছ খুব একটা উঁচু হয় না। মাটিতে দাঁড়িয়েই হাত দিয়ে ছিঁড়ে নেওয়া যায় আপেল। তাছাড়া এটাও জানি যে, আপেল বাগানের গাছ থেকে আপেল পাড়া নিষেধ। 

বেশ কিছুক্ষণ আপেল বাগানের সাথে, আপেল গাছের সাথে, আপেলের সাথে আদিখ্যেতা করে, বাগানের পাশে রাস্তার ধারে আপেল বিক্রেতার কাছ থেকে আপেল কিনে, তাও আবার তার সাজিয়ে রাখা ডালার আপেল একটাও পছন্দ হলো না। শেষে পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা সরু চোঙার মতন ঝুড়ি থেকে একটা পছন্দসই আপেল তুলে, দরদাম না করে দোকানদারের হাতে দশটা টাকা দিয়ে দিলাম। এরমধ্যে বাকি তিনজন, তারা তাদের মতন আপেল বাগান দেখে, ওপরে মানে রাস্তায় এসে আপেল বিক্রেতার কাছ থেকে দরদাম করে দু কেজি আপেল কিনে নিয়েছে। তা সেসব শব্দের সাহায্যে বুঝে নিয়েছি৷ তাকিয়ে দেখার অবকাশ পাইনি। কারণ, আমি বাগানের প্রতি একটু বেশী সময় দিয়ে ফেলেছিলাম। আমার দলের সদস্যরা খুবই ভালো। পুরো ট্যুরটায় আমার এইরকম অনেক ছেলেমানুষীকে তারা অকাতরে প্রশয় দিয়ে গেছেন। ও বলতে ভুলে গেছি, এর মধ্যে প্রচুর ছবিও তোলা হয়ে গেছে। 

যাইহোক সেই আপেল খেয়ে, মানে চোখে দেখে, চেখে দেখে, ফিরে চললাম উত্তরকাশীর কালী কমলির ধর্মশালার দিকে। খুব মিষ্টি, সুস্বাদু ও রসালো আপেল। এতো মিষ্টি আর রসালো আপেল আমি খুব কমই খেয়েছি। আপেলে কামড় দিলেই মনে হচ্ছে, ঠোঁটের কষ বেয়ে রস গড়িয়ে পড়বে! আপেল খেয়ে এত সুখ, এত আনন্দ যে পাওয়া যায় তা এর আগে জানা ছিলো না। কত দিনের ইচ্ছে ছিলো, গাছ থেকে সদ্য পাড়া আপেল খাবো। আজ সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো। পাশাপাশি, একটা বিষন্নতাও আমাকে গ্রাস করে ফেললো, যে আমি আমার স্ত্রী, পুত্রকে এই আনন্দের শরিক করতে পারলাম না বলে! কারণ কাশ্মীর ট্যুরে ওরা আমার সাথে ছিলো। রুক্ষ, শুষ্ক আপেল বাগান দেখে ওরাও কষ্ট পেয়েছিলো। ওদের কষ্টটা ঘোচাতে পারলাম না। আর কোনোদিন সে সুযোগ পাবো কিনা জানিনা! তাই এত আনন্দের মাঝেও বিষাদের সুর আমাকে আবিষ্ট করে ফেলেছিলো। বিয়েবাড়ীতে সানাইয়ের সুরের মতন। বিয়ে বাড়ী মানে, হইচই, আনন্দ, কিন্তু বিয়ে বাড়ীতে যে সানাই বাজে তার সুর বড়ই করুণ! 

আমাদের বাড়ীতে খুব একটা আপেল ঢোকে না। যদিও সেই প্রবাদ বাক্যটা আমার জানা, যে বাড়ীতে রোজ আপেল প্রবেশ করে, সে বাড়ীতে চট করে ডাক্তার প্রবেশ করে না।  

যাইহোক আমরা আপেল পর্ব শেষ করে এগিয়ে চললাম উত্তর কাশীর কালি কমলির ধর্মশালার উদ্দেশ্যে। সেখানেই সেদিন ( ২৪/০৯/২৩ ) রাত্রিযাপন। পরদিন সকালে ( ২৫/০৯/২৩ ) রওয়ানা হবো রামপুরার দিকে। গৌরিকুণ্ডের কাছাকাছি জায়গাটা। রাতটা আবার ওখানকার কালি কমলির ধর্মশালায় থাকবো। 

এখানে একটা কথা বলা খুবই দরকার। গঙ্গোত্রীতে GMVN এর গেস্ট হাউসে থাকবো বলে আগে থাকতেই বুকিং করা ছিলো, ২৪/০৯/২৩ তারিখের জন্য। আর গঙ্গোত্রী মন্দির দর্শনের পাশাপাশি জি এম ভি এন এর গেস্ট হাউস টাও দেখে নিয়েছিলাম। গেস্ট হাউসটাও ভারী সুন্দর, মন্দির লাগোয়া। খুব সুন্দর লোকেশন। এখানে থাকলে সন্ধ্যেবেলা সন্ধ্যারতি দর্শন করা যেতো। আরও কিছু দ্রষ্টব্য দেখা যেতো। এখানে থাকলে হাতে যথেষ্ট সময় পাওয়া যেতো। 



কিন্তু বাদ সাধলো গঙ্গোত্রী থেকে রামপুরের দূরত্ব। প্রায় তিনশো কিলোমিটার বা তার কিছু বেশীও হতে পারে। যেখানে ( রামপুরে) রাত্রিযাপন করে পরদিন ভোরেই বেরিয়ে পড়বো কেদারনাথের উদ্দেশ্যে। পাহাড়ি রাস্তায় এতটা পথ পাড়ি দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হয়ে যাবে। এখানে কয়েক দিন ট্রাভেল করে যা বুঝেছি, রাস্তা সব জায়গায় ভালো নয়। রাস্তাও কোথাও কোথাও খুবই অপ্রশস্ত এবং দুর্গম । যার ফলে মাঝে মাঝেই ট্রাফিক জ্যামের সম্মুখীন হতে হয়। তাতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। আমাদের প্রোগ্রাম নির্দিষ্ট, যেমন অন্যান্যদেরও থাকে। সেখানে কোথাও ফেঁসে গেলে প্রোগ্রাম কাঁটছাঁট হয়ে যেতে পারে। 
চার ধাম দর্শন করে ফেরার সময় ট্রেনে একটা দলের সাথে কথা হচ্ছিলো, ওরা এসেছে আসানসোল থেকে। ওদের ট্রেন অস্বাভিক লেট করায় ওদের নির্দিষ্ট চার ধাম দর্শনের পরিবর্তে তিন ধাম দর্শন করেই ফিরে যেতে হচ্ছে। 

তাই সব দিক চিন্তা করেই দেবুদা আগের দিন অর্থাৎ,( ২৩/০৯/২৩ ) প্রস্তাব দিয়েছিলো, যে গঙ্গোত্রীতে রাত্রিবাস না করে আমরা, আবার ফের উত্তরকাশীর কালি কমলির ধর্মশালাতেই রাত কাটাবো (২৪/০৯/২৩) । পরদিন (২৫/০৯/২৩) সকাল সকাল রওয়ানা দেবো রামপুরার দিকে। তাতে পথের দূরত্বটা অনেক কমে যাবে। আর আমরাও তাড়াতাড়ি রামপুরে পৌঁছে যেতে পারবো। ওখান থেকে গৌরিকুণ্ড খুব কাছেই। রাতটা ওখানে কাটিয়ে ( ২৫/০৯/২৩ ), পরদিন ( ২৬/০৯/২৩ ) ওখান থেকেই শুরু হবে আমাদের কেদারনাথ যাত্রা। আমরা সবাই মেনে নিয়েছিলাম। পরে বুঝেছিলাম দেবুদার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিলো। নাহলে খুব ভুগতে হতো। কারণ, উত্তরকাশীর ধর্মশালা থেকে ( ২৫/০৯/২৩) বেরিয়ে রামপুরে পৌঁছেছিলাম রাত ৮.৩০ নাগাদ। মাঝে ট্রাফিক জ্যাম ও বৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়েছিলো। সেটা যদি গঙ্গোত্রী থেকে রামপুর আসতে হতো, তাহলে কপালে অশেষ ভোগান্তি ছিলো। যদিও আমাদের বর্ষীয়ান সদস্য, যিনি পুরো প্রোগ্রামটা সাজিয়েছিলেন যথাসম্ভব নিখুঁত পরিকল্পনা করে। কিন্তু পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপায়ন করার সময় নিজেদের স্বার্থেই একটু আধটু অদলবদল করে নিতে হয়৷ যদিও এতে অজিতদা নিমরাজি ছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে মেনে নিয়েছিলেন। ধর্মশালার ম্যানেজারের সাথে কথা বলতেই তিনি বলেছিলেন, ঘর নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। ঘর আছে পেয়ে যাবেন। ব্যস হয়ে গেলো। 

কালি কমলির ধর্মশালায় আমরা পেয়েছিলাম, অনেকটা দু কামরার স্যুটের মতন। কমন একটা দরজা দিয়ে ঢুকে পাশাপাশি দুটো ঘর। দুটো ঘরেরই দরজা আছে। তবে কমন দরজা বন্ধ থাকলে আর কেউ আমাদের ঘরে আসতে পারবে না। 

তবে শেষে বলি, হরসিলের আপেলের স্বাদ কিন্তু চমৎকার ছিলো। আপেল খেয়ে এতো সুখ আগে কখনো পাইনি। এ যেন স্বর্গের নন্দনকাননের আপেল বাগানের আপেল!! এ সুখ স্বর্গীয় সুখ, এ স্বাদ স্বর্গীয় স্বাদ!! এ স্বাদের ভাগ হবে না!!!