দিনপঞ্জিকায় বোমা বিশারদ মণীন্দ্রনাথ নায়েকের জীবনী - Pralipta


অনির্বাণ সাহা :

১৭ই অক্টোবর, ১৮৯০ খ্রীস্টাব্দ
মণীন্দ্রনাথ নায়েক হুগলী জেলার চন্দননগরে বোড় থানার পূর্বে ঘোষপুকুরধারে, মামা রাজেন্দ্রনাথ নন্দীর বাড়ি জন্মগ্রহন করেন। 

১৮৯৮ - ৯৯ খ্রীস্টাব্দ
মণীন্দ্রনাথ নায়েক মাত্র আট বছর বয়সে চন্দননগরের কলেজ ডুপ্লেক্স-এ (অধুনা কানাইলাল বিদ্যামন্দির) ভর্ত্তি হন।

১৯০২ খ্রীষ্টাব্দ
- মাত্র ১২ বছর বয়সে মনীন্দ্রনাথ তার মা নগেনবালা দেবীকে চিরতরে হারান।
- মতিলাল রায় 'সত্‍পথাবলম্বী' সম্প্রদায় তৈরি করে, এক্ষেত্রে মাত্র ১২ বছর বয়সে মনীন্দ্রনাথ নায়েক অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দ
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের ঢেউ চন্দননগরে আছড়ে পড়ে, মতিলাল ও মনীন্দ্রনাথের নেতৃত্বে সরষে পড়া থেকে একটি মিছিল সারা শহর জুড়ে পরিক্রমা করে। 

১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দ
মানকুন্ডুর কাছে এলাকার ব্রিটিশ ছোটো লাটের গাড়ি উড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে বোমা প্রস্তুত করেন মনিন্দ্রনাথ নায়েক ও সুরেশচন্দ্র দত্ত। 

১৬ই নভেম্বর, ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দ
মনীন্দ্রনাথের পিতা ভূষণচন্দ্র নায়েক পরলোক গমন করেন। তখন মনীন্দ্রনাথের বয়স মাত্র ১৭। 

১৯০৮ খ্রীষ্টাব্দ
- কলেজ ডুপ্লেক্স থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি।
- অধ্যাপক গোবিন্দচন্দ সেনগুপ্ত মহাশয়ের বইতে মনীন্দ্রনাথ নায়েকের জীবনচারণার কথা অংশত প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকেই জানা যায় এই বছর থেকেই তিনি অপটু হাতে বারুদ, নারকেলের খোলা, ছোবড়া ইত্যাদি দিয়ে প্রথম বোমা তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। 

১৯০৯ খ্রীস্টাব্দ
হুগলিতে প্রাদেশিক কংগ্রেসের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অরবিন্দ সেই সম্মেলনে চরমপন্থীদের পক্ষে যোগদান করলে মণীন্দ্রনাথ সেখানে স্বেচ্ছাসেবকের কাছে নিজেকে নিয়োজিত করেন। 

১৯১০ খ্রীষ্টাব্দ
- মনীন্দ্রনাথের চন্দননগরের বাড়িতে এসেই তাকে বোমা তৈরীর শিক্ষাদান করতে শুরু করেন নগেন্দ্রনাথ। কয়েক মাসের মধ্যেই মনীন্দ্রনাথ এই শিক্ষায় কৃতকার্য হয়। 
- অরবিন্দ ঘোষ চন্দননগর থেকে পন্ডিচেরি যাত্রা করার পর থেকেই মতিলাল রায়ের সাথে পত্র যোগাযোগ ছিল। সেই সব চিঠির তর্জমা রচনা করা এবং তার রক্ষণাবেক্ষণের গুরুদায়িত্ব ছিল মনীন্দ্রনাথের উপর। 

জুলাই, ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দ
হুগলির শ্রীপুর গ্রাম গ্রামের শান্তশীলা দেবীকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করেন মনীন্দ্রনাথ। 

১৯১১ খ্রীস্টাব্দ
- ফরাসী ভাষা নিয়ে প্রথম বিভাগে আই.এস.সি পাশ করেন।
- মতিলাল রায় রাসবিহারী বসুকে বিপ্লবের শিক্ষা দান করেন। তার প্রতিষ্ঠিত প্রবর্ত্তক সংঘের মাঠে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর তৈরি বোমাটি প্রথম পরীক্ষা করা হয় মনীন্দ্রনাথের উপস্থিতিতে। 
- প্রবর্তক সংঘে বসেই বড়লাট হার্ডিঞ্জকে হত্যার নীলনক্সা তৈরি হয় ও মণীন্দ্রনাথ নায়েকের দ্বারা বোমা প্রস্তুত করা হয়। 
- ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের পুলিশকর্তা ডেনহ্যামকে মারার জন্য প্রবর্তক সংঘে মাঠে বসেই মণীন্দ্রনাথ নায়েকের দ্বারা বোমা প্রস্তুত করা হয়। 

২৩শে ডিসেম্বর, ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দ
দিল্লিতে লর্ড হার্ডিঞ্জের উপর যে বোমা নিক্ষিপ্ত হয় তা চন্দননগরে মনিন্দ্রনাথ নায়েকের হাতে প্রস্তুত। এই বোমাটি রাসবিহারী বসুর হাতে তুলে দেন চন্দননগরের বাসিন্দা নলিনচন্দ্র দত্ত ওরফে পশুপতি শ্রীশচন্দ্রের মাধ্যমে।

১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দ
- স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা থেকে বি.এস.সি.পাশ করেন। 
- রাসবিহারী বসু পাঞ্জাবের ক্যাপ্টেন গর্ডনকে হত্যা পরিকল্পনা সফল করার জন্য চন্দননগর থেকে মণীন্দ্রনাথ নায়েকের দ্বারা প্রস্তুত বেশ কয়েকটি বোমা নিয়ে যান।
- বর্ধমানের দামোদর নদের প্লাবনে বন্যা হলে মণীন্দ্রনাথ নায়েকের নেতৃত্বে চন্দননগরের বেশকিছু যুবক আর্ত মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেন।

১৯১৪ খ্রীস্টাব্দ
কলকাতার রডা কোম্পানী থেকে লুন্ঠিত মাউজার পিস্তল ও গুলি গোপনে চন্দননগরে এলে তা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত হয় মণীন্দ্রনাথ নায়েকের উপর।

২রা মার্চ, ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দ
কলকাতা শোভাবাজার থেকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে মনীন্দ্রনাথ নায়েককে। কিন্তু বিপ্লবীদের সাথে যোগসূত্র খুঁজে না পাওয়ায় সেই দিনেই তাকে মুক্ত করতে বাধ্য হয়ে তারা। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে করে চন্দননগরে চলে আসেন সেদিন সন্ধ্যাবেলায়। কিন্তু আগামী পাঁচবছর চন্দননগরের বাইরে না যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারি হয় তার উপরে ব্রিটিশ পুলিশ কর্তৃক।

১২ই এপ্রিল, ১৯১৫ খ্রীস্টাব্দ
তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “প্রবর্তক” নামক পাক্ষিক পত্রিকা। কিন্তু তৎকালীন সময়ে সমস্ত আইনি বেড়াজাল পেরিয়ে পত্রিকাটি মুক্ত বাজারে প্রকাশিত হয় ১লা সেপ্টেম্বর তারিখে। 

১৯১৫ খ্রীস্টাব্দ
বিপ্লবী মনীন্দ্রনাথ নায়েকের হাতে চন্দননগরে প্রস্তুত বোমা মিরাটের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ডেরায় পৌছায়।

১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দ
পুলিশি তল্লাশিতে নিজ বাড়িতে বোমা তৈরির মশলা পাওয়া গেলে বিপ্লবী মণীন্দ্রনাথ নায়েক  কারারুদ্ধ হন। 

১৯১৯ খ্রীস্টাব্দ
- "ফ্রেঞ্চ ইন্ডিয়া লেজিসলেটিভ এসেম্বলির" সদস্য নির্বাচিত হন। 
- "ফ্রেঞ্চ ইন্ডিয়া লেজিসলেটিভ এসেম্বলির" সদস্য হিসেবে চন্দননগরের স্থানীয় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মনীন্দ্রনাথ নায়েক।

১৯২০ খ্রীস্টাব্দ
"ফ্রেঞ্চ ইন্ডিয়া লেজিসলেটিভ এসেম্বলির" সেনেটর নির্বাচনের অধিবেশনে যোগ দিতে পন্ডিচেরী যান। 

১৯২৩ খ্রীস্টাব্দ
তিনি মাদ্রাজে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভায় এবং পরে মুসলিপত্তমের সভায় উপস্থিত ছিলেন।

১৯২০ - ২৭ খ্রীস্টাব্দ
এই সময় থেকে প্রায় প্রতি বছর দুবার করে পন্ডিচেরী যেতেন অরবিন্দের সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য।

১৯৩০ খ্রীস্টাব্দ
আনুমানিক এই সময় থেকে তিনি মতিলাল রায়ের পরামর্শে অরবিন্দের আদর্শে আধ্যাত্মিকতার পথে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

১৯৪৫ খ্রীষ্টাব্দ
কলকাতায় নবগঠিত "দ্য ক্যালকাটা ক্যাবিনেট এন্ড ফার্নিশার্স অ্যাসোসিয়েশনের" সম্পাদক ছিলেন মনীন্দ্রনাথ নায়ক।

১৯৫৪ খ্রীষ্টাব্দ
এই বছর থেকেই মনীন্দ্রনাথ নায়েক চন্দননগরের প্রগতি সংঘের আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন।

১৭ই এপ্রিল, ১৯৭৬ খ্রীস্টাব্দ
স্বাধীনতার ২৯ বছর পর ৭৬ বছর বয়সে সকাল ১১:১৫ মিনিটে মণীন্দ্রনাথ নায়েক ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। 

... 
তথ্যসূত্র : 

- যে ধ্রুবতারা, সংখ্যা ৮ (মনীন্দ্রনাথ নায়েক)।

- দেশশ্রী হরিহর শেঠ মহাশয়ের লেখা “সংক্ষিপ্ত চন্দননগর-পরিচয়।

- বিমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের লেখা "বিপ্লবতীর্থ চন্দননগর"।

- শুভ্রাংশু কুমার রায় মহাশয়ের লেখা "শিকড়ের সন্ধানে চন্দননগর"।

- Dr. Ajit Mukhopadhyay & Kalyan Chakraborty মহাশয়ের লেখা "Discover Chandannagar" ।

- চন্দননগর (১৪৯৯-২০০০) : মনোরঞ্জন মুখার্জী।