Durga Puja 2022: গোরাদের হাতেই মায়ের বোধন, শোভাবাজার রাজবাড়ির এই অজানা ইতিহাস জানেন? - Pralipta

প্রলিপ্ত ডেস্ক : উত্তর কলকাতা মানেই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে বনেদিয়ানার দৃঢ় মেলবন্ধন।তিলোত্তমার ঐতিহ্যমণ্ডিত বনেদি বাড়ির পুজোর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন পুজো হল শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো।রাজা নবকৃষ্ণ দেব ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পরে এই পুজোর সূচনা করেন। ব্রিটিশ শাসক রবার্ট ক্লাইভের পলাশীজয়ের মধ্যে দিয়ে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গা পুজোর শুরু।রাজা নবকৃষ্ণ দেব ছিলেন ইংরেজদের মুন্সী।এই পূজো এ বছর ২৬৬ তম বর্ষে পদার্পণ করল।
১৭৯০ সাল থেকে এই পুজো দুভাগে ভাগ হয়ে যায়। অন্যান্য বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোর সাথে এর ডাকের সাজের পার্থক্য আছে।কৃষ্ণনগরের শিল্পীরা দেবীর ডাকের সাজ তৈরি করে দেন।মায়ের মুখ হলুদ বর্ণের।সিংহের গায়ের রং সাদা। মুখ ঘোড়ার মতো।আর ছোট তরফের সিংহের গায়ের রং আইভরি রঙের। গনেশের পোশাক মারওয়ারী ধরনের। এখানে মা দুর্গা অসুরনাশিনী হয়ে নয় বরং বাড়ির মেয়ে হিসেবে পূজিত হয়।

রীতি অনুযায়ী শোভাবাজার রাজবাড়িতে মূর্তির কাঠামো পুজো করা হয় রথের দিন। কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে বোধন হয় এই পুজোর।মহালয়ার দিন দেবীর চক্ষুদান করা হয়।শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গামূর্তির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল ,একই ছাঁচে তৈরি করা হয় মাতৃমূর্তিকে।ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বিল্ব বরণ, আমন্ত্রণ, অধিবাস হয়।ষষ্ঠী থেকে চণ্ডীপাঠও শুরু হয়। এখানে মা দুর্গা বৈষ্ণবী রূপে পূজিত হন। এখানে একচালা দুর্গাপ্রতিমার আরাধনা করা হয়।ষষ্ঠীর দিন দেবীকে গয়না পরানো হয় পরিবারের সদস্যরা এবং নানাবিধ অলংকারের মধ্যে ২৬টি সোনার তৈরি স্বর্ণচাঁপা দিয়ে মাকে সুসজ্জিত করে তোলা হয়।রূপোর কারুকাজ করা সোনার সিংহাসনে মা দুর্গাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়।সপ্তমীর দিন নবপত্রিকাকে গঙ্গায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ব্রাহ্মণ বাড়ি নয় বলে শোভাবাজার রাজবাড়িতে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। বিরাট কাঁসার থালায়চুড়ো করে শুকনো চাল সাজিয়ে তার উপরে সাজিয়ে দেওয়া হয় মঠ গোটা পান ও সুপারি। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে তেত্রিশটি থালায় করে চালের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। এছাড়াও দেবীকে দেওয়া হয় রাধাবল্লভী, সিঙ্গারা, খাস্তাকচুরি, জিভেগজা,জিলিপি, পদ্মনিমকি এবং রকমারি ফল। পুজোর আগে ভিয়েনের আগমনে বাড়ি গমগম করে ওঠে।যাবতীয় মিষ্টি তৈরি করা হয় বাড়িতেই। রাতে দেবীকে দেওয়া হয় মাখন-মিছরির ভোগ।এই বাড়ির ছোট তরফে এক সময়ে বিশাল বিশাল থালায় ১ কিলো ওজনের সাদা রংয়ের গোলমরিচ আর এলাচ মিশ্রিত মোতিচুর লাড্ডু ভোগে দেওয়া হয়। 

 সন্ধিপুজোর সূচনা হত কামান নির্ঘোষে।সন্ধিপূজোয় ১০৮ প্রদীপ ও পদ্ম ফুল ফোটানো হয়। সপ্তমী অষ্টমী এবং নবমীর দিন দেবীকে  চেলীর শাড়ি পরিধান করানো হয়।আগে পুজোয় ছাগলবলি দেওয়া হত কিন্তু এখন নবমীর দিন চালকুমড়ো, আখ আর মাগুরমাছ বলি দেওয়া হয়।নবমীর দিন দুই বাড়ি তরফ থেকেই দেবীকে সিধে দেওয়া হয়। এর মধ্যে থাকে চাল, ডাল, আনাজপাতি, মশলা, মানকচু, রুইমাছ, সৈন্ধব লবন, শাড়ি ও ধুতি।মা দূর্গাকে কনকাজ্ঞলি দেওয়ার রীতি আজও প্রচলিত।

মা দূর্গার বিসর্জন হয় ৪০ জন বাহকের কাঁধে চেপে।মাঝগঙ্গায় জোড়া নৌকায় করে প্রতিমা নিয়ে গিয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রাচীন আমলে বিজয়া দশমীর দিনে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ানোর রীতি রেওয়াজ ছিল কিন্তু এখন আর তার করা হয় না।কালের ভিড়ে বনেদিয়ানার সব রীতি রেওয়াজ এখনও ম্লান হয়ে যায়নি, এখনও নিষ্ঠাভরে দেবীর পূজো করা হয়।

তথ্যসূত্র ও ছবি : ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত