Janbazar Rajbari: জানবাজারের রাসমনির বাড়িতে দেবী দুর্গার সাথে পূজিত হন পঞ্চমহাদেব - Pralipta


প্রলিপ্ত ডেস্ক : মধ্য কলকাতার জানবাজারে দক্ষিণেশ্বরের প্রতিষ্ঠাত্রী রানি রাসমণির সাত মহলা বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজোয় যে ভক্তি ও নিষ্ঠাভরে দেবীস্তুতি করা হয় তা কলকাতার অন্যান্য দুর্গাপূজোর রীতি রেওয়াজকে ম্লান করে দেয়।ব্রিটিশ-শাসিত পরাধীন ভারতেই উনিশ শতকের শুরুতে জানবাজারের বাড়ির প্রথম পুজোটি শুরু হয়। ১৭৯৪ সালে রানি রাসমণির শ্বশুরমশাই বিখ্যাত জমিদার এবং ব্যবসায়ী প্রীতরাম মাড় (দাস)-এর হাত ধরে।

জানবাজারের বাড়িতে একচালা শোলার সাজ পরিহিতা দশভূজা মা দূর্গাকে আরাধনা করা হয়।রাসমণির বাড়িতে মূর্তির কাঠামো পুজো করা হয় রথের দিন।জানবাজার বাড়ির দেবীর গায়ের রং তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ,সরস্বতীর মুখ হয় সাদা। অসুরের মুখ সবুজ। সুসজ্জিতা দেবী আনা হয় বীরভূম থেকে।এই বাড়িতে আশ্বিণের শুক্লাপ্রতিপদ থেকে দেবীর বোধন শুরু হয়। ষষ্ঠীর দিন মাকে অলংকারে সুসজ্জিত করে তোলা হয়। এই বাড়ির দুর্গাপুজোর বৈচিত্র্য হল এখানে ছাঁচে ফেলে ঠাকুরের মূর্তি গড়া হয়না,বরং শিল্পীদের নিপুণ তুলির টানে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়।পরবর্তীকালে রানির মৃত্যুর পরে অবশ্য দেবী দুর্গার সঙ্গে পঞ্চ মহাদেব, রঘুবীর, রামকৃষ্ণ এবং সারদা মার পুজো করা হত।
মা দূর্গাকে পুজোর পাঁচদিন নুন ছাড়া লুচি ও পাঁচরকম ভাজা ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়, এবং তার সাথে দেওয়া হয় বিশেষ মাতৃভোগ মিষ্টি, খাজা, গজা বা নাড়ুও। পূর্ব আমলে বলি প্রথা হলেও এখন শুধু চালকুমড়ো ও আখ বলি দেওয়া হয়।সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিনদিন ধরে চলে কুমারী পুজো। কুমারীদের বয়সসীমা ১৬ বছর পর্যন্ত। দশমীতে দেবী দুর্গার বিসর্জন হয়,তার আগে বাড়ির বউরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন।
 দূর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে ইংরেজদের সঙ্গে রাণীর ঝামেলা হয়েছিল।ঘটনাটি হল পুজোর রীতি অনুযায়ী কলাবৌকে গঙ্গাস্নানে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাক ঢোল বাজিয়ে।সেই আওয়াজে ব্রিটিশ সাহেবের ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি মামলা করেন রানি রাসমণির বিরুদ্ধে,মামলা মোকদ্দমায় অবশ্য রানিরই জয় হয়েছিল।এই বীরাঙ্গনা তেজস্বী নারী একাই ব্রিটিশ শাসকের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।এই ঘটনা সেই সময়ে সকলের হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করেছিল।

১৮০০ শতকের রানি রাসমণি দেবীর অতি গাম্ভীর্যপূর্ণ আচরনে ইংরেজরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে থাকতেন। বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে আসতেন শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, রাজা রামমোহন রায়ের মতো বিশিষ্ট গুনীজনেরা। দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা, পালাগান, কবিগানের লড়াইয়ের আয়োজন করা হতো।অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, রামরাম বসু, ভোলা ময়রা প্রমুখ বিখ্যাত কবিয়ালরা এই কবিগানের লড়াইয়ের অংশগ্রহণ করে আসর জমাতেন।
প্রাচীণ এই বনেদি বাড়ির পুজো আজও অমলিন হয়ে আছে আভিজাত্য ও সাবেকিয়ানার ভিন্নস্বাদের সংমিশ্রণে।

তথ্যসূত্র ও ছবি: ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত