feature: ৮৮ তে পা দিলেন নীরার প্রিয় সুনীল - Pralipta


'ধরো যুদ্ধের দামামা বাজছে ঘরে ঘরে,
প্রচণ্ড যুদ্ধে তুমিও অংশীদার,
শত্রুবাহিনী ঘিরে ফেলেছে ঘর
এমন সময় পাশে বসে পাগলিনী আমি
তোমায় জিজ্ঞেস করলাম -
ভালবাসো?'

বাংলা উপন্যাসের জগতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজেই এক উজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। সফল ঔপন্যাসিকের পটজ্ঞান, চরিত্রচিত্রণের কারুতা, আকীর্ণ মানবপ্রতিমার নির্মাণ, সময়, চেতনা, মূল্যবোধ, বিচিত্র গল্প চয়নের কুশলতা, জীবন জিজ্ঞাসার ব্যাকুলতা, সত্যের অনুসন্ধান, রূপসৌকর্য – এর সবগুলিই তাঁর করায়ত্ত। কথাসাহিত্যের সম্রাট যেন প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র ও বিনয়ী।তার প্রতিটি উপন্যাস যেন মানব মনে বসন্তের বাতাবরণ তৈরি করেছে।

7 সেপ্টেম্বর 1934 সালে মাদারীপুর মহকুমার ফরিদপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।মাত্র চার বছর বয়সে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতায় চলে আসেন।পিতা কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতার টাউন স্কুলের শিক্ষক । সেই সূত্রে ১৯৩৮ সাল থেকেই উত্তর কলকাতায় বসবাস শুরু । চার ভাইবোনের মধ্যে সুনীলই বড় ।অভাব অনটনের মধ্যে সুনীলকে বই পড়ার নেশাটি ধরিয়েছিলেন মা মীরা দেবী । সেই থেকেই লেখালিখির সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছিলেন।

বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ পরবর্তী পর্যায়ের অন্যতম প্রধান কবি একইসঙ্গে তিনি আধুনিক রোমান্টিক। তাঁর লেখনীতে উঠে এসেছে ইতিহাস, সমকালীন প্রেক্ষাপট, প্রেম, নাগরিক জীবনের জটিলতা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়। কলকাতার নাগরিক জীবনকে তিনি অসাধারণ দক্ষতায় তুলে ধরেছেন সাহিত্যে।তার কবিতা যেন বাঙালির তপ্ত হৃদয়ে প্রেমের উন্মাদনা সৃষ্টি করেছে।তার কবিতায় রহস্যময়ী নারী হল 'নীরা'এই নারী চরিত্র আজও ধোঁয়াশার অন্তরালে রয়ে গেছে।

নীললোহিত নাম নিয়ে সুনীল নিজের একটা পৃথক সত্তা তৈরি করেছিলেন।তাঁর ছদ্মনাম নীললোহিত যেন আপনভঙ্গিতে স্বতন্ত্র।1953 সাল থেকে তিনি কৃত্তিবাস নামে একটি কবিতা পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেনদিলীপকুমারের পরামর্শ এবং সহায়তা নিয়েই ‘ কৃত্তিবাসে’র পথ চলা শুরু।1958 এ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ একা এবং কয়েকজন এবং 1966 খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম উপন্যাস আত্মপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। এটি ছিল সাহিত্যে একজন নতুন আগন্তুকের প্রথম লেখা যা মর্যাদাপূর্ণ ম্যাগাজিন।তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হলো- আমি কিরকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী, হঠাৎ নীরার জন্য, শ্যামবাজারের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রথম আলো, সেই সময়, ভানুও রানু, মনের মানুষ। তারই হাত ধরেই বাংলা উপন্যাসে রহস্যের কান্ডারী কাকাবাবুর প্রবেশ ঘটে এবং এই চরিত্রের উপর একটি ধারাবাহিক উপন্যাস রচনা করেন যা ভারতীয় শিশু সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। 1985 সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন তাঁর উপন্যাস সেই দিনগুলির জন্য।সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বেশ কিছু গল্প উপন্যাসের কাহিনীকে চলচ্চিত্রে রুপায়িত করা হয়েছে।এর মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অরণ্যে দিনরাত্রি এবং প্রতিদ্বন্দ্বী খুবই উল্লেখযোগ্য।
১৯৭০ সাল থেকে পাকাপাকি ভাবে আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হলেন । সুনীলের নিজের চিত্রনাট্যে তৈরি ছবি ‘ শোধ ’ জাতীয় পুরস্কার পায়।১৯৮৫ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন সুনীল। ২০০২ সালে সুনীল কলকাতার শেরিফ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭২ ও ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন।23 অক্টোবর 2012 খ্রিস্টাব্দে হৃদযন্ত্র জনিত অসুস্থতার কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

৮৮ তম জন্মদিনে তার প্রতি রইল আন্তরিক শ্রদ্ধা।তার অকাল প্রয়াণে তার অসামান্য রোমান্টিক কবিতা ও উপন্যাসের সমাপ্তি নয়,তিনি ও তার নীরা আজও বাঙালি মধ্যবিত্তের হৃদয়ে স্বমহিমায় বিরাজমান।
... 
লিখছেন : কোয়েল সাহা