Sri Lanka: বৌদ্ধধর্মের পীঠস্থান ও প্রাচীন শ্রীলঙ্কার রহস্যময় অতীতের পৃষ্ঠার কী আদৌও সমাপ্তি ঘটল? - Pralipta

 



কোয়েল সাহা  :  কল্প কাহিনী শুনতে আমরা সবাই ভালোবাসি । রামায়ণ মহাভারতের গল্প আট থেকে আশি সব বয়সী মানুষের ভালোবাসার বিষয়। রাবনের সোনার লঙ্কা নিয়ে কৌতুহলের পাশাপাশি অনুসন্ধানেরও শেষ নেই আজও। আমরা জানি  ইতিহাস মানেই অতীত বৃত্তান্ত বা কালানুক্রমিক অতীত কাহিনি ও কার্যাবলির লিখন, বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ন। সকলের মুখে চর্চিত সেই রাবনের সোনার লঙ্কার আসল নাম শ্রীলঙ্কা। চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রাচীন শ্রীলঙ্কার উৎস ও তার ইতিবৃত্ত।

পৃথিবীর প্রাচীনতম দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। হাজার হাজার বছরের নিজস্ব ঐতিহ্য আর একেক ধর্মের একেক রকম মিথ, এই দেশটাকে মোটামুটি রূপকথার রাজত্বই বানিয়ে ফেলেছে। পর্যটকের দুর্নিবার টান আছে এই দেশ পরিভ্রমণের। পালি ভাষায় লেখা মহাবংশ, দীপবংশ ও চোলবংশ নামক তিনটি বইয়ের ধারাবিবরণী ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে এই দ্বীপের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।


                                 


সংস্কৃত ভাষায় শ্রী শব্দের অর্থ 'পবিত্র' আর লঙ্কা শব্দের অর্থ 'দ্বীপ' অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা শব্দের অর্থ "পবিত্র দ্বীপ‌"। পুরানে উল্লেখিত শ্রীলঙ্কা ছিল ৪টি মহাকাব্যের অন্যতম  মহাকাব্য রামায়নের বিখ্যাত চরিত্র রাবনের রাজধানী। শোনা যায় এর প্রাচীন নাম ছিল সিলন ,যার উৎপত্তি পালি শব্দ সিংহল থেকে। পালি ভাষায় সিংহল শব্দের অর্থ  ল্যান্ড অফ দ্যা লায়ন বা সিংহের দেশ । এই নাম নিয়েও অনেকের মধ্যে অনেকরকম মতবিরোধ লক্ষ্য করা যায়।


ঐতিহাসিক বিবরণ :

 


উত্তর ভারত থেকে সিংহলিদের আগমনের সময় থেকে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যায়। দ্বীপটির আধুনিক ইতিহাস ৩য় শতাব্দীর সময়ে শুরু হয়েছে।এই ধারাবিবরণীগুলোতে খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে সিংহলিদের আদি পূর্বপুরুষদের দ্বারা তাম্বাপান্নি রাজ্যের প্রতিষ্ঠার সময়কাল থেকে শ্রীলংকার ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। 

শ্রীলঙ্কা একটি বৃহৎ দ্বীপ রাষ্ট্র। ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল হতে বিচ্ছিন্ন এ দেশটি ভারত মহাসাগরে অবস্থিত। বর্তমানে এর রাজধানী শহরের নাম কলম্বো। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে সিলন নামে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমানে এটি সরকারীভাবে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রি শ্রীলঙ্কা নামে পরিচিত। 



১৫৯৭-১৬৫৮ সালে দ্বীপের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পর্তুগিজ শাসনের অধীনে ছিল। তবে আশি বছরের যুদ্ধে ডাচদের হস্তক্ষেপের কারণে পর্তুগিজরা সিলনে স্থাপিত উপনিবেশ হতে সরে যায়। কান্দিয়ান যুদ্ধের পর ১৮১৫ সালে দ্বীপটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে একত্রিত হয়। তবে ঔপনিবেশিক শাসন শুরু হওয়ার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ১৮১৮ সালে উভা বিদ্রোহ এবং ১৮৪৮ সালে মাতালে বিদ্রোহ নামক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দুটি সশস্ত্র বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল। অবশেষে ১৯৪৮ সালে শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা লাভ করেছিল। তবে দেশটিতে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আধিপত্য ছিল।


প্রাগৈতিহাসিক যুগের সূত্রপাত : 



শ্রীলঙ্কার প্রাগৈতিহাসিক যুগে আাদি মানবের (বালাঙ্গোদা মানব) যে দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল তা প্রায় ৩৮,০০০ বছর পূর্বেকার। বালাঙ্গোদা মানুষেরা আনুমানিক ১,২৫,০০০ বছর আগে দ্বীপে এসেছিলেন এবং গুহায় বসবাসকারী মেসোলিথিক শিকারী-সংগ্রাহক হিসেবে বসবাস করতেন। সুপরিচিত বাটাডোমবালেনা এবং ফা হিয়েন গুহা সহ এই গুহাগুলির মধ্যে অনেক নিদর্শন পাওয়া গেছে।


বালাঙ্গোদার মানুষ গাছ পুড়িয়ে মধ্য পাহাড়ে হর্টন সমভূমি তৈরি করেছিল। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সমভূমিতে ওটস এবং বার্লির চাষের নিদর্শন দেখা যায়। এ আবিষ্কার থেকে বোঝা যায়, এই উপদ্বীপে প্রথম দিকে কৃষি বিকশিত হয়েছিল।


শ্রীলঙ্কায় আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহের অন্যতম হল গ্রানাইট টুল (প্রায় ৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য), পুড়ে যাওয়া কাঠের অবশিষ্টাংশ এবং মাটির পাত্র ইত্যাদি মেসোলিথিক যুগের সামগ্রী। ওয়ারানা রাজার মহা বিহার এবং কালাতুওয়াওয়া এলাকায় একটি গুহার আশেপাশে সাম্প্রতিককালে একটি খননকার্য পরিচালনার সময় ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কালের মানুষের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে।


শ্রীলঙ্কার স্থানীয় এলাকায় এবং ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন মিশরে দারুচিনি পাওয়া গেছে, যা মিশর এবং দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রাথমিক বাণিজ্যের ইঙ্গিত দেয়। তবে বিশ্ববিখ্যাত দারুচিনির উৎসভূমি শ্রীলঙ্কা এর পাশাপাশি লিপটন  চায়েরও উৎসস্থল ছিল শ্রীলঙ্কা। সম্ভবত বাইবেলের উল্লেখিত তার্শিশ এই দ্বীপে অবস্থিত ছিল। জেমস এমারসন টেনেন্ট গ্যালে নগরীতে সম্ভাব্য তার্শিশকে শনাক্ত করেছেন।

প্রোটোহিস্টোরিক প্রারম্ভিক লৌহ যুগ দক্ষিণ ভারতে অন্তত ১২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে বলে মনে হয়। শ্রীলঙ্কায় এ যুগের প্রথম প্রকাশটি হয় রেডিওকার্বন-ডেটেড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। খ্রিস্টপূর্ব ১০০০-৮০০ অনুরাধাপুরা এবং সিগিরিয়ায় আলিগালা আশ্রয়ে এ যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া যায়।



প্রোটোহিস্টোরিক সময়কালে (১০০০-৫০০ খ্রিস্টপূর্ব) শ্রীলঙ্কা সাংস্কৃতিকভাবে দক্ষিণ ভারতের সাথে একত্রিত ছিল এবং এ দুটি অঞ্চলে একই মেগালিথিক সমাধি, মৃৎপাত্র, লোহার প্রযুক্তি, চাষের কৌশল এবং মেগালিথিক গ্রাফিতির ব্যবহার দেখা যায়। 


শহরের অস্তিত্ব :


শ্রীলঙ্কার  অন্যতম প্রাচীন শহরের নাম অনুরাধাপুর। কলম্বো থেকে ২০৬ কিমি. দূরে অবস্থিত এই এলাকাটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করেছে ইউনেস্কো।অনুরাধাপুরায় শ্রীলঙ্কার লৌহ যুগের সূচনার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়।  এখানে দেখতে পাওয়া যাবে ১৩ মিটার উঁচু গ্রানাইট পাথরের তৈরি বুদ্ধের স্ট্যাচু আওকনা বুদ্ধ। রাজা দাথুসেনের শাসনকালে নির্মিত হয়েছে এটি। পাবেন তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত ইসরুমিনিয়া মন্দির। এই মন্দির বিখ্যাত রক কার্ভিংসের জন্য। এবং  রাজা দুতুগামানুর ছেলে সালিয়া এবং তার প্রেমিকার কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত খোদাইচিত্র ‘লাভারস’ নামের কার্ভিং। অসাধারণ খোদাই চিত্র এটি। অনুরাধাপুরের আরও বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে এর মনাস্ট্রি এবং স্তূপগুলো। অভয়গিরি এখানকার সবচেয়ে বড় মনাস্ট্রি কমপ্লেক্স। এছাড়াও এখানে দেখার আছে মিহিনতালের মন্দির, জেথাওয়ানের মনাস্ট্রি, ওয়ানভেনির সেয়া। 


আরো জানা যায় অনুরাধাপুর রাজ্যের প্রাথমিক যুগে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষিকাজ। শ্রীলঙ্কার প্রাথমিক বসতিগুলি মূলত পূর্ব, উত্তর মধ্য এবং উত্তর-পূর্ব এলাকার নদীগুলির কাছে তৈরি করা হয়েছিল, কেননা এর ফলে সারা বছর চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল প্রাপ্তির সুবিধা ছিল। রাজা ছিলেন দেশের শাসক এবং আইন, সেনাবাহিনী এবং বিশ্বাসের রক্ষাকর্তা। 



মৌর্য-সংস্কৃত অর্থশাস্ত্রে শ্রীলঙ্কার মুক্তা ও রত্নের উল্লেখ আছে। কৌলেয় নামক এক ধরণের মুক্তা সেই পাঠ্যটিতে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং এটি সিংহলের ময়ুরগ্রাম থেকে সংগৃহীত বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। সে সময় পারসমুদ্র নামক একটি রত্ন সিংহল থেকে সংগ্রহ করা হতো।


বাংলার রাজকুমারের পদার্পন শ্রীলঙ্কার মাটিতে : 

৪০০ খ্রিস্টাব্দে সন্ন্যাসী মহানাম মহাবংশ নামক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এটি দীপবংশ, আত্তাকথা এবং তাঁর কাছে উপলব্ধ অন্যান্য লিখিত উৎস ব্যবহার করে রচিত এবং সেই সময়ের ভারতীয় ইতিহাসের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। শ্রীলঙ্কায় পালিভাষায় রচিত সিংহলের দুটো প্রাচীন ইতিহাস আছে। একটির নাম, ‘দীপবংশ’ অপরটির নাম ‘মহাবংশ’। প্রথমখানি রচিত হইয়াছিল খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে, দ্বিতীয়খানি রচিত হইয়াছিল

খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ ভাগে।দ্বীপের প্রাচীনতম গ্রন্থ দীপবংশ এবং মহাবংশ অনুসারে, এ দ্বীপে ইন্দো আর্যদের স্থানান্তরের আগে ইয়াক্কাস, নাগাস, রাক্কাস এবং দেবগণ প্রভৃতি জাতি বসবাস করত। সম্রাট অশোকের রাজত্বের একটি বিস্তারিত বিবরণ মহাবংশে লিপিবদ্ধ আছে।বুদ্ধের মৃত্যুর ২১৮ বছর পর অশোকের রাজ্যাভিষেকের আগের সময়ের বিবরণটি কিংবদন্তি বলে মনে করা হয়। বঙ্গ থেকে বিজয়া এবং তার ৭০০ অনুসারীর আগমনের সময়কাল হতে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া শুরু হয়। বিজয়ার সময় থেকে রাজবংশের বিবরণের বিস্তারিত বর্ণনা মহাবংশে দেওয়া আছে।

প্রশ্ন ওঠে কে এই বিজয় ? 

বিজয় হল প্রাচীন বাংলারই এক রাজপুত্র। শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের লিখিত তথ্য অনুযায়ী- বঙ্গের রাজা কলিঙ্গের (বর্তমান উড়িষ্যার) এক রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। তাদের এক কন্যা হয়েছিল এবং সেই কন্যার সঙ্গে রাঢ় দেশের সিংহ উপাধিধারী ‘আটবিক’ এক ক্ষত্রিয় বীরের বিয়ে হয়েছিল। এই বিবাহজ পাত্র সিংহবাহু রাঢ়ে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ‘সিংহপুর’ (সে কালের প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধ নগরী) থেকে রাঢ় শাসন করতে থাকে। রাজা সিংহবাহুর ও তার বোন রানী সিংহশিভালির জ্যেষ্ঠ পুত্র হল বিজয়‌ ।




মহাবংশ অনুসারে, বিজয়া শ্রীলঙ্কায় মহাথিথার (মন্থোটা বা মান্নার) কাছে অবতরণ করেন এবং তাম্বাপর্ণি দ্বীপের নামকরণ করেন ("তাম্র রঙের বালি")।



বিজয়ের লঙ্কাজয়ের কাহিনীটি শ্রীলঙ্কায় অত্যন্ত সুপরিচিত ও জনপ্রিয়। শ্রীলঙ্কার জনগনের বিশ্বাস - যে বছর গৌতম বুদ্ধ মহাপরিনির্বান লাভ করলেন অর্থাৎ মৃত্যুবরণ করলেন সে বছরই বাংলার রাজপুত্র বিজয় সৈন্যসামন্ত নিয়ে সিংহল দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন। তার মানে সময়টা ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্ব। অবশ্য এই নিয়ে অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। কারও কারও মতে বুদ্ধের মহাপরিনির্বানের বছর খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ এবং সে কারণে বাংলার রাজপুত্র বিজয় সিংহল দ্বীপে অবতরণ করেছিলেন ৪৮৩ খ্রিস্টপূর্বে নয় বরং ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বে । 


বৌদ্ধধর্মের প্রচার : 




প্রাচীন কাল থেকে শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধধর্মালম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।  খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকে প্রাচীন ভারতের মৌর্য সম্রাট অশোকের সময়েই শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধধর্ম প্রচার আরম্ভ হয় ।খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে অনুরাধাপুর রাজ্যের রাজা পান্ডুকাভায়াকে শ্রীলঙ্কার প্রথম শাসক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে আরহাথ মাহিন্দা (ভারতীয় সম্রাট অশোকের পুত্র) দ্বীপটিতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেন। অশোকের সময়ে সিংহল দ্বীপের রাজা ছিলেন দেবনামপ্রিয় তিসা। তিনি (২৫০-২১০ খ্রিস্টপূর্ব) সিংহলী এবং মৌর্য বংশের রাজার বন্ধু ছিলেন। সম্রাট অশোকের সাথে তার সম্পর্কের ফলে উক্ত অঞ্চলে ২৪৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিল। সঙ্গমিতা (মাহিন্দার বোন) জাম্বুকোলা (কঙ্কেসান্থুরাইয়ের পশ্চিমে) হতে একটি বোধির চারা এনেছিলেন। এই রাজার রাজত্ব থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম এবং শ্রীলঙ্কার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মূলত তাঁর একান্ত উদ্যেগেই খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতক থেকেই সিংহল দ্বীপে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে, এবং বিহার ও সঙ্ঘরাম প্রভৃতি বৌদ্ধ মঠ গড়ে উঠতে থাকে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার মতোই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বিহারে বিদ্যচর্চা করত। সেই সঙ্গে ইতিহাস চর্চাও করত। তারাই শ্রীলঙ্কার রাজাদের পূর্বাপর ইতিবৃত্ত রচনা করার কথা ভেবে পালি ভাষায় সিংহল দ্বীপের রাজাদের ইতিহাস মহাবংশ বা ‘গ্রেট ক্রনিকল’ লিখেছিল। মহাবংশে সিংহল দ্বীপে বিজয়ে আগমন থেকে শুরু করে রাজা মহাসেন। বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই যে , বাংলার রাজকুমার বিজয়ের লঙ্কাজয়। ভারতের প্রাচীন সাহিত্যে এই ঘটনার কিছুমাত্র উল্লেখ নাই।’ এ থেকে বোঝা যায় বিজয়ের লঙ্কাজয় সম্পর্কে অন্যতম উৎস ছিল প্রাচীন সিংহল দ্বীপের বৌদ্ধ ভিক্ষুকেরা। জীবদ্দশায় অবশ্য বুদ্ধ বেশ কয়েকবার শ্রীলঙ্কায় এসেছিলেন। গৌতম বুদ্ধের দাঁতের পবিত্র স্মরণচিহ্ন শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডি মন্দিরে সুরক্ষিত আছে। ত্রিপিটক আলুবিহার নামক গ্রন্থ মাতাল নামক অঞ্চলে পালি ভাষায় লেখা হয়েছিল।



প্রাচীন তামিল দেশ (বর্তমানে দক্ষিণ ভারত) এবং শ্রীলঙ্কার সাথে রোমানদের বাণিজ্য ছিল। তারা অনেক অঞ্চলে বাণিজ্যের জন্য বসতি স্থাপন করে যা পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের অনেক পরেও টিকেছিল।



সর্বশেষে এই শান্ত সুনিবিড় , সমুদ্রে ঘেরা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় শ্রীলংকা দ্বীপকে বলা হয় ল্যান্ড অব সেরেন্ডিপিটি। ভারতের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় এই সৌন্দর্য্যমন্ডিত শ্রীলংকায় যাওয়া খুব একটা কঠিন নয় ,এই রহস্যময় দ্বীপের লুকিয়ে থাকা রামায়ণ ও গৌতম বুদ্ধের অজানা কাহিনী নিজের চোখে পরখ করে দেখতে হলে অবশ্যই  যেতে হবে সনাতন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী অত্যাশ্চর্য দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায়। আগামী দিনে এই দ্বীপরাষ্ট্রের আরও অজানা তথ্য অনুসন্ধানের অপেক্ষায় আছে সমগ্র বিশ্ব।