বিরহড় আদিবাসীদের উপকথা - Pralipta

মৌমিলা দাস: কাদের বলা হয় বিরহড়? বিরহড় হল এক আদিবাসী সম্প্রদায়। এই আদিবাসী সম্প্রদায় আদিম জনগোষ্ঠীর তালিকার অন্তর্গত। বির শব্দের অর্থ "বন" এবং "হড়" শব্দের অর্থ হলো "মানুষ"। অর্থাৎ যারা বনে বসবাস করেন মূলত তাদের কেই বলা হয় বিরহড়। এই আদিম জনজাতির দুটি ভাগ রয়েছে একটি হল উথশ্ব এবং আর একটি হলো ড্যামি। উথশ্বরা পুরোপুরি ভাবে যাযাবর অর্থাৎ এদের স্থায়ী কোনো বাসস্থান নেই। আর ড্যামিরা স্থায়ী বসবাসকারী।

ভারতবর্ষে যে পঁচাত্তরটি (আনুমানিক) আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে তার মধ্যে একটি হল বিরহর গোষ্ঠী সম্প্রদায়। এরা মূলত পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় বসবাস করে। এই জেলায় মোট ১০৮ টি বিরহড় পরিবারের বাসস্থান রয়েছে (২০১৮ সালের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী)।

এরা সাধারণত বনের ফলমূল, শাকপাতা খেয়েই জীবনযাপন চালায়। নির্দিষ্ট কোনো জীবিকা নেই তাদের। বনজ সম্পদই হল একমাত্র ভরসা। গাছের কাঠ এবং গাছের পাতা থেকে সৃষ্টি বিভিন্ন ভেষজ ঔষধপত্র বিক্রি করে দিন যাপন করে তারা। এই প্রজাতির একটি পারদর্শিতা রয়েছে চিহড়লতার দড়ি প্রস্তুতিতে। একসময় এই দড়ির চাহিদাও ছিল বেশ ভালো।

মূলত গানের মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে জ্ঞাপন পদ্ধতি চালায় এই সম্প্রদায়। বাক-শিল্পকে ব্যবহার করে নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করে তারা। যেমন - 
"সেদায়দ রেঁগেচ্ তে-বুরুলাঙ সেনঃআ
কান্টে আড়াঃক আগুয়ালাঙ।
রেঁগেচ্ তে হপনদ, চেঁহের চেঁহের দুক, ইয়াম্ কানা।
দাঃ তেতাংতে মাড়ি জ্বালাতে
এটাঃ ডেরাতে হপন ইয়ামায়।" 

এর অর্থ "আগে আমরা খিদের জ্বালায় শাকপাতা তুলতে বনে যেতাম। খিদের জ্বালায় ছেলেরা কাঁদতো। জলের কষ্টে, মাড়ের সন্ধানে আমরা অন্যত্র চলে গেলাম।”

এই বন আদিবাসীরা কুকুবুরু, মাঠাবুরু, লুগুবুরু, পরেশনাথ ইত্যাদি দেবতার পুজো করতেন। এই দেবতাদের পুজোগুলি বেশিরভাগটাই মাঘ মাসে করা হয় এবং এই প্রজাতির ভাবনা অনুযায়ী বছর শেষ হয় মাঘ মাসে। পুরানে কথা অনুযায়ী এই সমাজে বিবাহের সময় নাকি বর এবং কনের আঙ্গুল কেটে সেই রক্ত দিয়ে একে অপরের সিঁথিতে পড়ানো হয়।

পশ্চিমবঙ্গের এক অন্যতম সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায় হল এই বিরহড়। বর্তমানে সরকার এই বিকল্প প্রজাতিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধম্যে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন আদিবাসীরা। পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়া, বিভিন্ন ভাতা প্রদান এছাড়াও জীবন ধারণের বিভিন্ন কাজের ব্যবস্থা যেমন ১০০ দিনেই কাজ, পশুপালনের জন্য মুরগি, ছাগল প্রদান প্রভৃতি সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। আগের তুলনায় এখন অনেকটাই শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করছেন এই বিরহড় আদিবাসী গোষ্ঠী।