গল্প | তবু আনন্দ জাগে | শিল্পা দে | Haraf | Pralipta


বাঁ পাশের সর্পিলাকার রাস্তাটা সোজা গিয়ে ঠেকেছে যেখানে,সিঁড়ির পর সিঁড়ি পেরিয়ে একটা প্রকাণ্ড দালান খাঁ খাঁ করছে। দালানের একপাশে একটা ফাঁকা ঘর,সামনে তুলসীর মঞ্চ নিস্প্রদীপ। পঞ্চমী পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ হই-হুল্লোড়, ধুনোর গন্ধ দূর অস্ত একটা ধূপও জ্বলছে না। প্রতিবছরের নিয়মে হঠাৎ-ই ছেদ। যে ভয়টা পাচ্ছিলাম সেটাই হল। নমো নমো করে পুজো হওয়ার কথা ছিল। প্রতিমাও বায়না দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। পুরোহিত,ঢাকি রেডি সবই। অথচ কি যে হল,পরশু দিনের পর থেকে পাড়ায় একের পর এক মানুষের রিপোর্ট আসছে কোভিড পজেটিভ! পাড়ায় গুঞ্জন, দিন ছয়েক আগে এই দালানেই পুজো সংক্রান্ত একটা সভা হয়েছিল সেখান থেকেই সম্ভবত রোগ ছড়িয়েছে! আজ দুপুর অব্ধিও সমান তালে অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ,একের পর এক প্রিয় মানুষদের হাসপাতালে চলে যেতে দেখে এবং করোনার ছোবলে বাড়ির উল্টোদিকের দুই প্রৌঢ়- প্রৌঢ়ার মৃত্যু সংবাদ শুনে ভয়ে সিঁটিয়ে আসছিল শরীর। সকালে দালান অবশ্য স্যানিটাইজ হয়েছে কিন্তু মৃত্যুমুখী অবরুদ্ধ পাড়ায় পুজো কার্যত অসম্ভব৷ তবুও আমি এলাম শূন্য দালানের মুখোমুখি। ঝুপ করে নামছে অন্ধকার।

থমথমে আকাশের চাঁদ টা যেন দালানের সিঁড়ির উপরে এসে বসেছে। আমিও সেই সিঁড়ি-র উপর বসে পড়লাম। আজ হঠাৎ কি মনে হল,ডেটা কানেকশন অফ করে কানে হেডফোন গুঁজে আঙুল ছোঁয়ালাম...100.1 FM GOLD...

"...বোধনের আগেই শুভ সংবাদ শোনালেন WHO- র ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রোস অ্যাধানোম ঘেব্রেয়েসাস। এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, ভারতে আবিষ্কৃত ICMR অনুমোদিত ভ্যাক্সিন টি-কেই অনুমোদন দিচ্ছে WHO. খুব দ্রুত ভারতের বাজারে কোভিড ভ্যাক্সিন টি উপলব্ধ হবে..."
সন্ধ্যে ৬-টা র খবর পড়ছিলেন সঞ্চালিকা। অজস্র নক্ষত্রে ছেয়ে যাচ্ছে আকাশ। শূন্য দালানের ভিতর থেকে যেন ভেসে আসছে ঢাকের বাদ্যি। কাল ষষ্ঠী। আজ বোধন হল কোভিড ভ্যাক্সিনের। তবু আনন্দ জাগে...