বিশিষ্ট লেখক বিনোদ ঘোষাল এর সাথে প্রলিপ্ত - Pralipta

 
বিশিষ্ট লেখক বিনোদ ঘোষাল এর সাক্ষাৎকারে প্রলিপ্ত

প্রলিপ্ত প্রতিনিধি - ১. কিছুদিন আগেই কে বাজায় বাঁশির দ্বিতীয়খন্ড প্রকাশিত হল। অনেক অনেক অভিনন্দন তার জন্য৷ প্রথমখন্ড প্রকাশিত হওয়ার প্রায় দু-বছর পর দ্বিতীয়খন্ড প্রকাশিত হল। প্রথমখন্ড প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকদের থেকে কীরকম প্রতিক্রিয়া এসেছিল?

বিনোদ ঘোষাল - উপন্যাসটা যখন লিখতে শুরু করেছিলাম তখন, প্রথম কথা আমি একদমই ভাবিনি, যে এই উপন্যাস মানে কাজী নজরুল ইসলাম, অন্তত এপার বাংলায় জনমানুষে অনেকটাই বিস্মৃত। ফলে এই উপন্যাসের পাঠক সম্বন্ধে যে আমার খুব আশা ছিল তেমনটা নয়।কিন্তু তাও একটা দায়বদ্ধতা ভেতরে ভেতরে কাজ করেছিল যে, এই মানুষটাকে আমায় জানাতে হবে এবং শুধু জানাতে হবে নয় আমি নিজেও খুব কম জানতাম, নিজেকেও জানতে হবে। এবং তারপরে যখন এটা রোববার-প্রতিদিনে ধারাবাহিক হিসেবে বেরোতে শুরু করলো, আমি ভেবেছিলাম যে হয়ত কতিপয় পাঠক হবেন, যারা অন্তত ষাটোর্ধ্ব। আমি খুব আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম, যে উপন্যাসটা একেবারে কুড়ি একুশ বছরের তরুণ থেকে একদম বৃদ্ধ মানুষের স্পর্শ করছে। অবশ্য এটাতে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। এই মানুষটার জীবনটাই এমন যে, যেকোনো বয়সের মানুষের হৃদয়ে দোলা দিতে সক্ষম। ফলে প্রথম পর্ব যখন ২০১৮ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়, পাঠক মহল থেকে এক অবিশ্বাস্য রকমের সাড়া পেয়েছি। সেই অসামান্য অভূতপূর্ব সাড়াটাই আমাকে আবার দ্বিতীয়পর্ব লিখতে উৎসাহিত করেছিল। এবং তারপরে যেহেতু দ্বিতীয়পর্বে রিসার্চটা প্রচুর পরিমাণে, ফলে দুু-বছর টানা লাগলো আমার দ্বিতীয়পর্ব শেষ করতে। 

প্রলিপ্ত প্রতিনিধি - ২. বইটি মূলত কাজী নজরুল ইসলামের জীবন কাহিনী নিয়ে লেখা। ওনাকে নিয়ে এরকম গবেষণামূলক কাজ বাংলা সাহিত্যে খুব কমই হয়েছে। এরকম কিছু নিয়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা ঠিক কি ছিল সেটা যদি বলেন? 

বিনোদ ঘোষাল - আমি একটা সময়ে সম্ভবত ২০১৪-১৫ সালে আমি আনন্দবাজার পত্রিকার শনিবারের ক্রোড়পত্রে বিভিন্ন বাঙালি সাহিত্যিকদের জীবন নিয়ে ফিচার লিখতাম যেমন - তারাশঙ্কর, শিবরাম চক্রবর্তী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ, ত্রৈলোক্যনাথ প্রমুখ। স্বাভাবিকভাবেই সেই সময় বিভিন্ন রকমের লেখকদের জীবন সংক্রান্ত বইপত্র আমি লাইব্রেরীতে পড়তাম। সেই সময় আমার হাতে একটি বই এসে পৌঁছায় কাজী নজরুল ইসলামের ঠিক জীবনী বলবোনা স্মৃতিকথামূলক একটি বই। আমি তখন সেটি পড়ার কথা ভাবি, এবং পড়ার পর আমি চমকে যাই। যে কাজী নজরুল ইসলামকে ছোটবেলা থেকে ভেবে এসেছি, যেটুকু চিনে এসেছি, ওই সামান্য একটা ছোট্ট বই আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। বা বলা যেতে পারে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন দিয়েছিল। আমি এরকম ভাবে কাজী নজরুল ইসলামকে কখনো ভাবিনি, আমরা চিরকাল ওনাকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে সাম্যবাদী কবি হিসেবে দেখে এসেছি। যিনি মানবমুক্তির কথা বলতেন, ওনার জীবনটা ছোট থেকে জানা বৈচিত্রে ভরা। ব্যাস এর থেকে বেশি কিছু জানা আমার ছিলনা। যে বইটা আমার হাতে এসেছিল সেই বইটার নাম হচ্ছে "নজরুল জীবনে নারী"।  অর্থাৎ নজরুল কত মানবীর সান্নিধ্যে এসেছিলেন, তাদের সঙ্গে যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, এবং সেই বইটা পড়ে মনে হয়েছিল তিনি অসাধারণ একজন প্রেমিক মানুষ। এবং সেই প্রেমের কি অসাধারণ গভীরতা। সেটা পরে আমি একরকম অন্য নজরুলের পরিচয় পাই। তখন মনে হল যে এত বছর ধরে ধরুন ২০০২-২০০৩ সাল থেকে আমি সাহিত্য জগতে পা দিয়েছি, ১৫-১৬ বছর হয়ে গেল লিখছি অথচ কাজী নজরুল ইসলামের মতো একজন সত্তাকে আমি লেখক হিসেবে জানিনা তাহলে তো সাধারন মানুষরা তো কিছুই জানে না। তখন আমার মনে হয়েছিল এনাকে নিয়ে শুধুমাত্র একটি ফিচার লিখে আমার দায়িত্ব শেষ হয় না। এরম একটা সাংঘাতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য জীবনকে নিয়ে আমার আরও বড় কিছু একটা করা উচিত। তখনই আমার মাথায় আসে তাহলে আমি কি করবো। নজরুল জীবনী এপার বাংলা এবং ওপার বাংলায় অনেক লেখা আছে ওপার বাংলা তুলনামূলক বেশি আছে, যদিও নজরুলের সমগ্র কর্মজীবন এপার বাংলাতেই ছিল। নজরুলের জীবনী শুধু নজরুল কেন যেকোনো জীবনী সাধারণ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া পড়ে না। হয়, তাকে গবেষণা করতে গেলে পড়তে হয় না হলে, কিছু লিখতে গেলে পড়তে হয়। সখে মানুষ পড়ে কিন্তু জীবনী নয় সখে মানুষ পড়ে গল্প-উপন্যাস এসব। তখন আমার মনে হয়েছিল আমি যদি আরেকটা জীবনী লিখি তাহলে আমি তাতে নতুন কি দেব! নজরুল সম্পর্কে খুব নতুন কোনো তথ্য আর পাওয়ার কিছু নেই। কারণ যেটুকু পাওয়ার ছিল সেটুকু গবেষকরা বার করে ফেলেছেন এর বেশি আর কিছু নেওয়ার নেই কারণ সেই সময়কার মানুষগুলোও আর নেই এবং যা যা সংগ্রহ করার তা হয়ে গেছে। আমি এটা ভাবলাম আমি যদি জীবনটাকে একটু অন্যরকমভাবে দেখাই, অর্থাৎ তার জীবনটাকে যদি কাহিনীর আঙ্গিকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। সেটা অনেক বেশি পাঠকের মনকে ছোঁবে, যেমনভাবে প্রশান্তকুমার পাল এর "রবি জীবনী"। যতনে মানুষ এই বইটা পড়েছে তার থেকে অনেক বেশি পড়েছে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম আলো। অর্থাৎ কাহিনীর মাধ্যমে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যেহেতু রবীন্দ্রনাথকে চিনিয়েছিলেন ফলে, অনেক বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল প্রশান্ত পালের জীবনীর থেকে। আমার তখন মনে হয়েছিল ওই যে আটটা দশটা জীবনী সাধারণ মানুষ পড়েই নিয়ে একমাত্র গবেষণা বা বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া, তখন আমার মাথায় এলো আমি যেহেতু একটু গল্প-উপন্যাস লিখতে পারি, এবং যেহেতু চরিত্রটি একদম আদর্শ একটি উপন্যাস লেখার জন্য। তখন আমার মনে হল উপন্যাসের পথটাই বেছে নেওয়া ভালো। এই ভাবনা থেকেই কিন্তু আমার প্রথম এত বড় ধারাবাহিক উপন্যাস কে বাজায় বাঁশি লেখার শুরু। 

প্রলিপ্ত প্রতিনিধি - ৩. সাধারণত মানুষজনের মধ্যে জীবনী পড়ার ব্যপারটা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবনতাই বেশি দেখা যায়। এরকম একটা বিষয় নিয়ে লেখা তার উপস্থাপন করা আপনার কাছে কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

বিনোদ ঘোষাল - অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি চিরকালই খুব চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসি, আমি যখন লিখবো ভাবলাম, আমি প্রথমেই ফোন করলাম রোববার প্রতিদিনকে। যেহেতু রোববার-প্রতিদিনের একটি বিশেষ সুপাঠক রয়েছে। যেখানে ঋতুপর্ণ ঘোষ সম্পাদক ছিলেন এখন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এই পত্রিকার সম্পাদক। আমি এখানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লেখালেখি করেছি। আমি ওই সম্পাদকমন্ডলীকে ফোন করে জানালাম যে আমি এরকম একটা ধারাবাহিক দেখতে চাই এবং বিষয়টার ব্যাপারেও বললাম। এটা শুনে বললেন ঠিক আছে আমি কি লিখতে চাই তা মোটামুটি একটা খসড়া ওনাদের পাঠিয়ে দিতে। তখন আমার হাতে ছিল সর্বসাকুল্যে তিনটে বই এখন আছে যদি ৮৮ টা বই। ওই জীবনী যেটুকু পড়েছিলাম মোটামুটি ভেবে নিয়েছিলাম এই লিখব, তো তার ওপরে ভিত্তি করে আমি ওদেরকে একটা খসড়া পাঠিয়ে দিলাম। ওদের সেটা পছন্দ হয় এবং ওরা বলল  আমাকে মোটামুটি চারটে এপিসোড ১ মাসের মধ্যে পাঠিয়ে দিতে। চারটে এপিসোড মানে  আড়াইহাজার শব্দ করে মোট ১০ হাজার শব্দ। তখন সেটা আমার কাছে সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। উপন্যাস লেখার জন্য যেটা দরকার সেটা হলো একটা চরিত্র কে ভিজুয়ালাইজ করা। একটা চরিত্রকে রক্তমাংসের মানুষ করে দাঁড় করানো। তিনি ওই সময় ঐখানে গিয়েছিলাম শুধুমাত্র একটুকু নয় সেটা হলো জীবনীতে থাকবে। এটা হল তথ্য। কিন্তু সেই মানুষটা সেদিনকে কি জামা পরে গিয়েছিলন, সেটা তার চরিত্রের সাথে যায় কিনা সেই মানুষটা কার সাথে কি গল্প করতে করতে গেলেন সেই সময় তার কি মানসিকতা ছিল, এগুলো সবটাই উপন্যাসের মধ্যে পড়ে। এবার এগুলোকে ম্যাচ করাতে গেলে আমাকে সেই মানুষের ভেতরে গিয়ে সেই চরিত্রকে বুঝতে হবে, অনুভব করতে হবে। আমার কাছে তখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো যে আমি লোকটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। কারণ আমি তো কখনও সেই অর্থে নজরুলকে নিয়ে ভাবিনি। সে কেমনভাবে কথা বলতো, সে কেমনভাবে হাসতো এগুলো তো কারো কাছ থেকে জানার উপায় নেই। কারণ তাকে অল্প বয়সে যারা দেখেছে তাদের মধ্যে কেউ এখন আর জীবিত নেই। এটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে গেল যে আমি লোকটাকে ভিজুয়ালাইজ করতে পারছিলাম না এবং আমি তাকে নিয়ে একটা লাইনও লিখতে পারছিলাম না।  এদিকে সময় হুড়মুড় করে পেরিয়ে যাচ্ছে। ওরা তাড়া দেওয়া শুরু করে উপন্যাসের জন্য এবং তখন আমার ১০০০০ শব্দ লেখা বাকি আছে।  আমি একটা শব্দ তখনও পর্যন্ত লিখতে পারিনি।  সেদিন বেশ রাত হয়েছে, ঘুম ছুটে গেছে এবং আমি বুঝলাম এই প্রথম জীবনে একটি বড় ধারাবাহিক লেখার সুযোগ পেলাম, এত ভালো একটা পত্রিকায় এবং সেখানে আমাকে ফোন করে বলে দিতে হবে যে, আমি পারছি না লিখতে। এটা খুবই দুঃখজনক ছিল আমার কাছে যে আমি একটা জিনিস পারলাম না এবং সেই সময় খুব অস্থিরতার মধ্যে কাটছিল এবং সেই সময় আমি মানসিকভাবে একটা খুব টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন প্রায় শেষ রাত্রে আমার ঘুম আসছিল না। শুয়ে শুয়ে ছটফট করতে করতে তখন আমার শোয়ার ঘরের লাগোয়া যে ছাদটা আছে সেখানে পায়চারি করা শুরু করি। ভাবছিলাম যে জীবনে আমি কি বড় ভুল করলাম কিছু না লিখেই কোন একটা জায়গায় আমি কথা দিয়ে ফেললাম। এরকম হাঁটতে হাঁটতে আমি ভাবছি হঠাৎই ছাদের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে অপরপ্রান্তে এক মুহূর্তের জন্য যেন দেখতে পেলাম বৃদ্ধ নজরুল সাদা ধুতি এবং সাদা ফতুয়া পড়ে এবং ঘাড়টা সামান্য নিচের দিকে ঝুঁকানো এবং বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এটা অবশ্যই হ্যালুসিনেশন কিন্তু ওই যে এক মুহূর্তের জন্য আমি তাকে দেখতে পেলাম। আমার মধ্যে কিসব যেন হয়ে গেল। আমি ওই ভোররাত্রে সোজা আমার একতলা লেখার ঘরে চলে এলাম। তখন প্রায় ভোর হয়ে গেছে আমি প্রথম লাইনটা লেখা শুরু করলাম "একটু আগে ভোর নামল"।  এই লাইনটা লেখার পর না জানি কি হল আমি ঝড়ের বেগে লেখা শুরু করে দিলাম। বোধহয় সেদিনকে বসেই আমি একটা এপিসোড শেষ করে দিয়েছিলাম। এবং তারপর আমি অসম্ভব তাড়াতাড়ি চারটে এপিসোড শেষ করে দিই। সেই যে লেখা শুরু হলো তারপর খুব অলৌকিক ভাবেই তারপর যখন যা আমার বই প্রয়োজন হয়েছে আমি বুঝতে পেরেছি এই বইটা আমার হাতের সামনে পৌঁছনোর কোন প্রশ্নই নেই আসতেই পারে না ম্যাজিক্যালি আমি সেটা হাতের সামনে পেয়ে গেছি। এটা এক আশ্চর্য যাত্রা ছিল আমার কাছে এই ভাবেই আমার লেখাটা শুরু হয়। 

প্রলিপ্ত প্রতিনিধি - ৪. কে বাজায় বাঁশি এরকম নামকরনের কারণটা কি সেটা যদি বলেন? 

বিনোদ ঘোষাল - নামকরণ একটা বিশাল ব্যাপার সেটা যে কোন লেখার ক্ষেত্রেই তার মধ্যে দিয়ে কি বলছি, কিছু একটা কথা তো থাকেই। কে আবার বাজায় বাঁশি নামে একটা গানের লাইন আছে। আমি ভাবছিলাম যে কি নাম দেওয়া যেতে পারে তখনই হঠাৎ মাথায় আসে নজরুল তো বাঁশিটা খুব সুন্দর বাজাতেন, তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই অসম্ভব ভালো বংশীবাদক ছিলেন তার একটি ছবিও আছে। তখন আমার মনে হয়েছিল আসল নজরুলকে ধরতে গেলে তার বাঁশির মধ্যে যে অদ্ভুত একটা উদাসীনতা একটা অদ্ভুত বৈরাগ্য আছে, এছাড়াও বাঁশি ভীষণ আটপৌরে বাঁশিকে নিয়ে যখন যেখানে খুশি যাওয়া যেতে পারে, যেটা  সরোদ বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র নিয়ে যাওয়া যেতে পারে না। খুব সাধারন একটা বাঁশ থেকে তৈরি একটা জিনিস। এটা নজরুলের জীবনের সাথে ভীষণ ভাবে যায়। আমি ভেবেছিলাম যে ওনারই কোন একটা গানের লাইন থেকে এরকম বাঁশি অনুষঙ্গে যাবে সেরকম কোন একটা গানের লাইন আমি নাম হিসেবে দেবো। নামকরন নিয়ে আমাকে অনেক ভাবতে হয়েছে তখন প্রচুরবার এরকম হয়েছে আমার লেখা জমা দেয়া হয়ে গেছে কিন্তু নাম কি হবে সেটা ঠিক করতে পারছিলাম না, ওরা বিজ্ঞাপন করতে পারছিল না তখন আমি লাস্টে ভাবলাম যে এই নামটাই দেয়া হবে আসলে নামটা মাথায় আচমকাই এসে গেছিল ঠিক যেমন আচমকা আমি লিখতে শুরু করেছিলাম। কে আবার বাজায় বাঁশি প্রথমে ভেবেছিলাম কিন্তু আবারটা এখানে উপন্যাসের ক্ষেত্রে শুনতে একটু অস্বস্তি লাগছিল। তাই আবারটা বাদ দিয়ে নামকরণ করলাম "কে বাজায় বাঁশি"। 

প্রলিপ্ত প্রতিনিধি - ৫. আপনি বলেছিলেন যে দ্বিতীয়খন্ড নিয়ে আপনাকে অনেক বেশি রিসার্চ  করতে হয়েছে তো দ্বিতীয়খন্ডের যে বিষয়বস্তুটি আপনি রেখেছেন সেটা নিয়ে যদি একটু কিছু জানান? 

বিনোদ ঘোষাল - প্রথম পর্বে ছিল হচ্ছে নজরুলের শৈশবকাল তার যুদ্ধে যাওয়া, যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তাঁর বাংলা সাহিত্যে পা দেওয়া এবং পরবর্তীকালে তার প্রনয় ও বিয়ে ঠিক হওয়া। দ্বিতীয় পর্বটা অনেক বেশি বর্ণাঢ্য অনেক বেশি ঘটনাবহুল। এখানে নজরুল বিদ্রোহী কবিতা রচনার করছে এখানে নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করছে। এখানে নজরুল কবিতা লেখার অপরাধে এক বছরের জন্য জেলে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। এখানে নজরুল 'কারার ঐ লৌহ কপাট' এবং 'সৃষ্টি সুখের উল্লাসে' মত অসাধারণ সমস্ত সৃষ্টি রচনা করেছেন। ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির আন্দোলনের একজন সাক্ষী থাকছেন। ভারতের রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িয়ে পড়ছেন মিছিল-মিটিংয়ে। এবং রবীন্দ্রনাথের সাথে নজরুলের পরিচয় ঘটছে। বাংলা সাহিত্যে সমস্ত দিকপালের সঙ্গে তখন নজরুলের আস্তে আস্তে পরিচয় ঘটছে। একদিকে যেমন নেতাজির সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে, আবার ওদিকে বিপ্লবী গোপীনাথ সাহা এর মত যারা স্বদেশীতে যুক্ত ছিলেন তাদের সঙ্গে আলাপ ঘটছে। তার থেকেও বড় কথা হচ্ছে নজরুলের যে প্রেম এবং বিয়ে ঠিক হচ্ছে সেটাও এখানে দেখানো হয়েছে। এই যে এত বড় বড় ঘটনায় সমস্তকিছুই দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে এবং আরও অনেক বেশি ডিটেলসে রয়েছে।

… 
প্রলিপ্ত প্রতিনিধি : কাঁকন খাঁড়া